‘চন্দ্রিল মশাইও দেখছি বিক্রি হয়ে গেলেন।', ‘ভাতার ভয়ে চুপ আছন’- গত কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র কটাক্ষের শিকার হয়েছেন। যে কোনও ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে চন্দ্রিলের ওপিনিয়ন শুনতে নয়া প্রজন্ম উদগ্রীব হয়ে থাকেন। কিন্তু আরজি কর ইস্যুতে এতদিন চুপ ছিলেন চন্দ্রিল। এবার তিনি শুধু বক্তব্য রাখলেন না, বরং শিল্পী শাসকদলের মাথা-কে রীতিমতো আক্রমণ শানালেন। মমতার ‘উৎসবে ফিরুন’ মন্তব্যের পালটা জবাব দিলেন শিল্পী।
উৎসব কাকে বলে?
চন্দ্রিল বললেন, 'যে জিনিসটাকে ঘিরে আমরা আনন্দিত হয়ে উঠি। বা যে জিনিসটা আমাদের দৈনন্দিন সাময়িক একটু মলম লাগাতে পারে। কিছু সময় বা কিছুদিনের জন্য আমরা দুঃখগুলকো ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু একজন প্রধান সমাজতত্ত্ববিদ উৎসবের একটি নতুন উপযোগিতা সম্পর্কে সম্প্রতি আমাদের একটি তথ্য সরবরাহ করেছেন, যেটা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন- উৎসব যদি শুরু হয়ে যায়, তাহলে তোমার প্রতিবাদ থেমে থাকতে হবে। প্রতিরোধ থেমে থাকতে হবে। বিদ্রোহ থেমে থাকতে হবে। রেফারি খেলা শেষে বাঁশি বাজালে তোমাকে চলে যেতে হবে, তুমি যত গোলেই হার না কেন।
তোমার মনের মধ্যে যতখানি ক্ষোভ সঞ্চিত হোক না কেন যতখানি ক্রোধ পুঞ্জীভূত হোক না কেন সেটাকে তুমি আর তা উগরে দিতে পারবে না। কারণ উৎসব শুরু হয়ে গেছে। উৎসব যে একটা সুমহান আব্বুলিশ যেটা বলে দিলে তুমি আর চোর ধরতে পারবে না। এটা এতদিন কেউ জানত না, এবার নতুন করে জানল।'
চন্দ্রিল ভাইরাল ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, অন্যায়ের প্রতিকার করার যাদের ছিল, তারা প্রমাণ লোপাটে সাহায্য করেছে। অন্যায়ের অন্যতম হোতাকে তিরস্কৃত করার বদলে পুরস্কৃত করা হয়েছে শাসকের তরফে। সোজাসুজি সন্দীপ ঘোষকে কটাক্ষ তাঁর।
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘একটু বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যায়, এই অন্যায়টাকে কেন্দ্র করে জনরোষ আছড়ে পড়লেও, আসলে শাসকদলের বা সরকারের অনেকদিনের অনেকগুলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। এটাকে কেন্দ্র করে সেটা উগরে এসেছে।’
তাঁর কথায়, তার পরেও আত্মসংশোধনের পথে হাঁটেনি শাসক। বরং চ্যালাচামুণ্ডারা হুমকি দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠিচার্জ হয়েছে। আন্দোলনকারীরা যা এঁকেছে মুছে দেওয়া হয়েছে। সোমবার নবান্ন বসে মুখ্যমন্ত্রী যে উৎসবে ফেররা কথা বলেন, তাকে বিঁধে চন্দ্রিল বলেন, 'শাসকদলের প্রধান একজন মানুষ আশ্চর্য উৎসবের তত্ত্বটা এনে হাজির করেছেন। বাবা যায় হয়েছে হয়েছে এবার উৎসবে ফিরে এসো, পুজোয় ফিরে আসো। বিপথে যাচ্ছিলেন, এবার ফিরে এসো।…. অনেক প্রশয় দিয়েছি, অনেক ছাড় দিয়েছি। আন্দোলন আন্দোলন খেলা হয়ে গেছে, বিদ্রোহ বিদ্রোহ খেলা শেষ, এবার আনন্দের স্কুলে এসে ভর্তি হয়ে যাও।
উৎসব একটা বিরাজ ইরেজার। যা দিয়ে উৎসবের আগে যা অন্যায় হয়েছে, সব মুছে গেল। নগর পুড়ছে, দেবালয় পুড়ছে…. কিন্তু ঢং করে ঘণ্টা বেজে গেছে, ক্যালেন্ডারে লাল দাগ এসে গেছে। তাই জ্বলন্ত সত্য থেকে তোমাকে মুখ ফিরেয়ে তোমাকে হইহই করে এগরোল খেতে হবে। দু-হাত তুলে নেত্য করতে হবে। মেলা বসাতে হবে। জলসা ঘটাতে হবে। কারণ তোমার রাজ্য এগিয়ে আছে। এবং এগিয়ে এসে একজন দেবী ধরামাধে অবতীর্ণা হয়েছেন।'
দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। সেই পুজোয় আদিশক্তির বন্দনা করে বাঙালি। অশুভের উপর শুভর জয়, এই চিরন্তন সত্যের সামনে মাথা নোয়ায় তাঁরা। চন্দ্রিলের কথায়,'যে পুজোয় দেখানো হয় একজন নারী অশুভের বিনাশ করছে… যে পুজোয় নারীশক্তির উদযাপন হয়, নারীশক্তিকে পুজো করা হয় সেই পুজোটা ব্যবহার করে তুমি ঢাকা দিচ্ছো এমন এক আন্দোলনকে যা নারী নির্যাতনের বিপক্ষে, যা নারীর সার্বিক শক্তি বৃদ্ধির পক্ষে!'
যে লোকটা অন্যায় করবে ভাবছে, তারা উৎসবের ঘাড়ে ঘাড়ে করবে, তাহলেই আর বিচারের দরকার পড়বে না। অপরাধী শিস দিতে দিতে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেও পেতে পারে! মত শিল্পীর।
‘অন্যায় যে করে আর অন্য়ায় যে সয়ে…’, রবি ঠাকুরের এই বাণীতে টুইস্ট দিলেন চন্দ্রিল। মনে রাখতে বলেলন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্য়ায় যে সয়ে উৎসব তাদের ঘিরে নদীসম বয়ে…. অন্যায় প্লাস্টিকে মুড়ে উৎসবের স্রোতে, ফেলে দাও ভেসে যাবে নানান হুজ্জোতে… কী স্লোগানে ফেঁপে উঠে রাজ্যের ভাবমূর্তি? অশেষ অন্যায় হোক, সঙ্গে হোক ফূর্তি'।