Biswajit Chatterjee: ‘ছেলে-মেয়ের সামনে আমায় গালিগালাজ করত’, প্রসেনজিতের মায়ের সঙ্গে বিয়ে ভাঙা নিয়ে বিস্ফোরক বিশ্বজিৎ

বলিউডের অন্যতম সুদর্শন নায়ক ছিলেন বাংলা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়। মায়ানগরীতে উত্তম কুমার যা পারেননি, তা করে দেখিয়েছিলেন তিনি। বম্বেতে (এখন মুম্বই) সাফল্য পেলেও বাংলায় খলনায়ক হয়েই ছিলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। নিজেও সে কথা ভালোভাবেই জানেন ৮৭ বছর বয়সী তারকা।‘বিশ্বজিতের ঘর ভাঙল’ একটা সময় শোরগোল পরেছিল টলিপাড়ায়। স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় এবং দুই নাবালক সন্তানকে ছেড়ে মুম্বইতে দ্বিতীয় সংসার পাতেন বিশ্বজিৎ, সেটা ভালোভাবে মেনে নেয়নি টলিগঞ্জ। রত্নার সঙ্গে ডিভোর্স নিয়ে সেভাবে কোনওদিন মুখ খোলেননি বিশ্বজিৎ। শেষ বয়সে এসে প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে বিস্ফোরক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। আনন্দলোকে প্রকাশিত নিজের আত্মজীবনীতে প্রসেনজিৎ-পল্লবীর বাবা জানান, রত্না চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করাটাই তাঁর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়!প্রথম স্ত্রী নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর অনস্ক্রিন রোম্যান্স নিয়ে সারাক্ষণ ঝামেলা করত, এর জেরে গোপনে চোখের জল ফেলতে হত বিশ্বজিৎকে। দাবি তাঁর। আত্মজীবনীতে বিশ্বজিৎ লেখেন, ‘১৯৬০ সালে ‘মায়ামৃগ’ মুক্তির পরপরই রত্নার সঙ্গে আমার সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়… রত্না কিন্তু সব জেনেশুনেই আমাকে বিয়ে করে। ও ভালভাবেই জানত আমি এরকম একটি পেশার সঙ্গে যুক্ত আছি যেখানে নায়িকাদের সঙ্গে অনস্ক্রিন রোম্যান্স করতে হবে… কিন্তু ও এসব মেনে নিতে পারল না’।তিনি আরও বলেন, ‘ওর জন্য আমাকে যে পরিমাণ মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে, চোখের জল ফেলতে হয়েছে, তা কখনও ভুলব না। ও এমনভাবে আমাকে অপমান করত, আমার উপর চিৎকার করত যে, আমি মেকআপ রুমে একা-একা বসে কাঁদতাম।….রত্না ভীষণ অ্যারোগেন্ট ছিল, আমার কোনও কথা শুনত না। আসলে ওর কিছু কাছের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় ছিল, যারা ওর মাথাটা খেত।’ বিশ্বজিৎ জানান, পরিচিত ও আত্মীয়রা সারাক্ষণ রত্নাদেবী প্ররোচণা দিত যে অন্য নায়িকার সঙ্গে পরকীয়ায় মজেছে স্বামী। ছেলে-মেয়ের সামনেই স্ত্রী তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন বলেও অভিযোগ করেন বিশ্বজিৎ।সহ্যশক্তির বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছিল তাঁর। পেশা সম্পর্কে সবটা জেনে বিয়ে করার পরেও স্ত্রীর এহেন আচরণ মানতে পারেননি বিশ্বজিৎ। তাঁর আরও অভিযোগ, ‘ছেলে-মেয়ের মনের ভিতর আমার সম্পর্কে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছিল রত্না। বুম্বা এখন সবকিছু বুঝতে পারলেও, পল্লবীকে আমি কখনও ক্ষমা করব না।’ বিশ্বজিৎ লিখেছেন, তাঁর বেডরুমে ঢুকে রত্নার পুরুষ বন্ধুরা আলমারি খুলে টাকা পয়সা বার করে নিত, এর প্রতিবাদেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ই রত্না চট্টোপাধ্যায় নিজে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ-কে। পার্ক স্ট্রিটে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন অভিনেতা। পরে মুম্বইতে গিয়ে থিতু হন।ডিভোর্স নোটিশ হাতে পেয়েও মুম্বইয়ের বাড়িতে স্ত্রী রত্না এবং দুই সন্তানকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বিশ্বজিৎ, কিন্তু সায় দেননি স্ত্রী। বর্ষীয়ান অভিনেতা জানান অনেক সময়ই এমন হয়েছে মুম্বইয়ের বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে দেখভালের জন্য কেউ ছিল না। খোঁজ নেওয়া তো দূর অস্ত, ছেলেমেয়েকেও কাছে ঘেঁষতে দিতেন না রত্না। প্রথম স্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, ‘রত্না নিজেকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করত। বলত, ‘আমি বিশ্বজিতের নামে চলি না।’ আসলে এখন বুঝি, বিয়ের প্রথম দিন থেকেই ওর সঙ্গে মতের মিল বা মনের মিল কোনওটাই হয়নি। ও খুবই ডমিনেটিং এবং উগ্র মেজাজের ছিল’। অশান্তি এড়িয়ে সংসার টেকাতে চেয়েছিলেন বিশ্বজিৎ, তবে কেরিয়ার ছেড়ে কলকাতায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। ছেলেমেয়েকে বরাবর নিজের সঙ্গেই রাখতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু রাজি হননি রত্না। অভাবকে সঙ্গী করে ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন প্রসেনজিতের মা। মিডিয়ার এই রিপোর্ট নিয়েও আপত্তি অভিনেতার। আনন্দলোকে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে তিনিএমনটাও লেখেন, ‘আমাকে এ-ও শুনতে হয়েছে যে, আমি নাকি আমার কোনও সম্পত্তি ওদের দিইনি। আমার জামির লেনের বাড়ি আমি লিখে দিই রত্নার নামে। আমার যাবতীয় ফিল্ম রাইটস সব ওর মায়ের নামে করে দিয়েছিলাম। রত্না যদি সব টাকা উড়িয়ে দেয় সেটা তো আমার দোষ নয়!’ এমনকী প্রথম স্ত্রীর বাপের বাড়ির অবস্থাও স্বচ্ছল ছিল বলে জানান বিশ্বজিৎ। তাঁর প্রশ্ন, ‘তা হলে রত্না যে সারাক্ষণ বলত, বুম্বা ও পল্লবীকে নাকি খুব অভাবে মানুষ করেছে! কেন সেটা করতে হল? আসলে সমস্যাটা হল, বুম্বার মা শুধু আমার উপর দোষ চাপিয়ে গিয়েছে।’পরবর্তীতে ইরা দেবীকে বিয়ে করেন বিশ্বজিৎ। তাঁদের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে সম্ভাবী চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন বাবার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও দ্বিতীয় বিয়ের পর প্রসেনজিতের সঙ্গে বিশ্বজিতের সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছিল। পরবর্তীতে নায়কের তৃতীয় স্ত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ও বাবা-ছেলের দূরত্ব মেটাতে অনেকটাই সফল হন।