প্রেসিডেন্সি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী, পরে কলকাতার নামী কলেজের অধ্যাপিকা। স্বচ্ছল-সভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অমতে জেদ ধরে বিয়ে করেছিলেন মনোজিৎ মন্ডলকে। কিন্তু সেই বিয়ে সুখের হয়নি। মাস কয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে নিজের ভাঙা দাম্পত্য নিয়ে অকপটে সবটাই জানিয়েছেন শোভন-বান্ধবী। বৈশাখীর কথায়, ‘আমাদের বিয়েটা আমার কাছে ছিল বিপ্লব’। বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে বিয়ে করেছিলেন বৈশাখী। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যখন মনোজিৎকে বিয়ে করি ওর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১১ হাজার টাকা ছিল, আমার প্রতিদিনের খরচ ছিল ১১ হাজার টাকা’।
সবার অমতে বিয়ে করেছিলেন তিনি, বৈশখী বলেন-'চেয়েছিলাম একজন শিক্ষিত মানুষকে বিয়ে করব। তার সঙ্গে অন্য়রকম পৃথিবী গড়ব। আমার মনে হয়েছিল আমি আর মনোজিৎ একটা অন্যরকম ভাবনাকে প্রশয় দিয়ে বিয়ে করছি। কিন্তু বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝেছিলাম প্রেমিক আর স্বামী এক নয়। স্বামী শব্দের মধ্যে যে প্রভুত্ব রয়েছে, উনি যেভাবে প্রভু হওয়ার চেষ্টা করলেন আমি মেনে নিতে পারিনি'। ২২শে সেপ্টেম্বর বিয়ের পর ডিসেম্বর মাসেই শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন বৈশাখী, শহর কলকাতাতেই বাবা-মায়ের বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন শোভন-বান্ধবী।
দাম্পত্য জীবন সুখী হয়নি বলেই সন্তান আনার ব্যাপারেও সন্দিহান ছিলেন বৈশাখী। মেয়ের জন্মের পরেও বদলায়নি পরিস্থিতি। বঙ্গভূমি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোভন-বান্ধবী বলেন, বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন দেখলেও মনে সাহস জুগিয়ে উঠতে পারেননি। ‘বিপ্লব করে বিয়ে’ সেই বিয়েতে হার, এমনটা হতে দিতে চাননি বৈশাখী। এই পরিস্থিতিতেই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ তাঁর। মনোজিৎ-এর সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা চরমে পৌঁছালে একদিন শোভন চট্টোপাধ্যায় বৈশাখীকে বাড়ি ছেড়ে তাঁর বাড়িতে এসে থাকার প্রস্তাব দেন, তখনও নিশ্চিত ছিলেন না বৈশাখী। ততদিনে রত্নার বিরুদ্ধে ডিভোর্সের মামলা দাখিল করেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।
বৈশাখী বলেন, ‘আমার স্নেহ, আমার মমতা, আমার ভালোবাসা সবটা দিয়েই আমি মনোজিতের সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি ওকে একদিনের জন্য সুখী করতে পারিনি। হয়ত আমার মধ্যে ঘাটতি ছিল, যা উনি মেনে নিতে পারেনি। এমন ঝামেলা হত, যা সামলানো যেত না। এরপর আমি মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে আসি। আর এই বেরিয়ে আসাটাই আমার কাছে ডিভোর্স ছিল। একটা কাগজে সই করাটা আমার কাছে ডিভোর্স নয়’।
বৈশাখী-শোভনের সঙ্গে যেমন প্রণয় ডোরে বাধা পড়েন, তেমনই অপর এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান মনোজিৎও। নতুন জীবন শুরু করতে চাইলে মনোজিৎকে কাগজে কলমে মুক্ত করবেন তা ঠিক করেছিলেন বৈশাখী। কিন্তু শুরুতে নিজেই ডিভোর্সের পক্ষে ছিলেন না মনোজিৎ। সেইসময় বৈশাখীর বাবার বাড়িতেই থাকবেন মনোজিৎ। বৈশাখীর কথায়,‘এই মহিলা যদি বিয়ে করার মেটিরিয়াল হত, তাহলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের বিয়ে দিতাম। ওই বাড়ির চাদরটাও আমার কিনে পাঠিয়ে দেওয়া, সেই চাদরে ওই মহিলা শুচ্ছেন, আমার রাতপোশাক পরে রাত কাটাচ্ছেন ওখানে। আমার ওই বাড়িতে আমার বাবা-মা সংসার করেছেন, আমি নিজে ৯ বছর সংসার করেছি। সেখানে এই মহিলাকে নিয়ে তোমার ঢোকা চলবে না’।
বৈশাখীর কথায়, অসুস্থ স্বামীর যথেষ্ট খেয়াল রেখেছেন তিনি। স্বামীর বোন-ম্যারো ট্রান্সফার হওয়ার পরেও রাতের পর রাত জেগে সেবা করেছেন। তবে সেইদিনগুলোর কথা ভুলে মিডিয়ায় তাঁকে বদনামের চেষ্টা করেছেন মনোজিৎ। তিনি বলেন, 'শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজের বাড়ির ঘর খুলে মনোজিৎ-কে এই বাড়িতে থাকতে বলেছিল, শোভন ওকে বলেছেন- তুমি তো বৈশাখীর বাড়িতেই থাকো, তাহলে এই বাড়িতেও থাকো'।
গত বছর এপ্রিলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনোজিৎ মণ্ডলের বিচ্ছেদে আইনি সিলমোহর দেয় আলিপুর আদালত। তাঁদের একমাত্র সন্তান মেহুল বৈশাখীর সঙ্গেই থাকে।