জুবিনর গর্গের অকাল মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে তিন দিন। তবে ভূমিপুত্রের আচমকা চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না অসম। মনভার গোটা রাজ্যের। কান্নায় ভেঙে পড়েছে তাঁর অগুণতি ভক্ত। নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে (এনইআইএফ) পারফর্ম করার একদিন আগে শুক্রবার সিঙ্গাপুরে সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে জুবিন গর্গ মারা যান। শনিবার রাতে জুবিন গর্গের মরদেহ দিল্লিতে আনা হয় এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তা গ্রহণ করেন। পরে মরদেহটি বিশেষ বিমানে গুয়াহাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় নেমে আসেন।
সিঙ্গাপুরে ময়নাতদন্তের পর গায়কের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছিল। প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায়, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে শিল্পীর। এই মৃত্যু ঘিরে কোনও রহস্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে আরও একটি ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অসলম সরকার। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন পরিবারের সম্মতি নেওয়ার পর রাজ্য সরকার মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে গর্গের দেহের আরও একটি ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৫২ বছর বয়সী গার্গ, সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে মারা যান। মঙ্গলবার সকালে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গুয়াহাটির এইমস-গুয়াহাটির কয়েকজন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে নতুন করে ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন শর্মা।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপকণ্ঠের সোনাপুরের কামারকুচিতে গর্গের পরিবারের প্রায় ৮৫ জন সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের উপস্থিতিতে হবে শেষকৃত্য। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন শর্মা। এর আগে নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালের আয়োজক শ্যাম কানু মহন্ত এবং গর্গের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মার বিরুদ্ধে একাধিক থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই মামলাগুলি তদন্তের দায়িত্বভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার নারী মুক্তি বাহিনী নামে একটি সংগঠন উৎসবের আয়োজক এবং গর্গের দলের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করে। নতুন এফআইআরে গর্গের ব্যান্ডের এক সদস্য এবং একটি টিভি চ্যানেলের মালিকের নাম রয়েছে।
জোরহাটে শেষকৃত্য করা বা অন্তত শেষবারের মতো মরদেহ সেখানে আনার দাবির মধ্যে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে গায়কের দেহ সেখানে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই এবং আবার দাহের জন্য গুয়াহাটিতে আনা হয়েছে। জোরহাট পুলিশ সোমবার ভোরে এক্স-এ একটি ট্র্যাফিক অ্যাডভাইজরি পোস্ট করে বলেছে যে পশ্চিম থেকে জোরহাট শহরে প্রবেশের ঠিক আগে অজন্তা বাইপাসের কাছে জাতীয় সড়ক ৩৭ (এনএইচ 37) অবরুদ্ধ ছিল।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে জুবিন গর্গকে ২৩ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটির কাছে কামারকুচি এনসি গ্রামে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানের সাথে দাহ করা হবে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জুবিন গর্গের স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গর্গ এবং বোন পামলে বোরঠাকুর উল্লেখ করেছেন যে তাঁর ৮৫ বছর বয়সী অসুস্থ বাবার পক্ষে শেষকৃত্যের জন্য জোরহাটে যাওয়া সম্ভব হবে না এবং এমনকি বার্ষিকী বা অন্যান্য আচারের সময়ও পরিবারের পক্ষে সেখানে যাওয়া কঠিন হবে। জুবিন গর্গের শেষকৃত্য গুয়াহাটির আশপাশের কোনও জায়গায় সম্পন্ন করার পরিবারের ইচ্ছার কথা বিবেচনা করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শর্মা জানান, গুয়াহাটির কাছে যেখানে তাঁর দাহ করা হবে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধও তৈরি করা হবে।