পুণেতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হার্দিক পান্ডিয়া চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় তাঁর ভাঙা ওভারের ৩টি বল করেন বিরাট কোহলি। এমনটা নয় যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগে কখনও বল করেননি বিরাট। তবে দীর্ঘদিন পরে তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাত ঘোরাতে দেখে উচ্ছাসে ভেসে যায় গ্যালারি।
পান্ডিয়া ছিকটে যাওয়ার পরে রোহিতদের কম্বিনেশন বদল করতে হয়। অল-রাউন্ডার শার্দুলকেও বসিয়ে ভারত বিশেষজ্ঞ ব্যাটার ও বোলারদের উপর নির্ভর করে দল সাজায়। সেই থেকে সূর্যকুমার যাদব মহম্মদ শামি খেলে চলেছেন বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভারতকে মাঠে নামতে হচ্ছে ৫ জন বোলার নিয়ে। বুমরাহ-শামি-সিরাজের পেস ত্রয়ীর সঙ্গে টিম ইন্ডিয়া দল সাজাচ্ছে জাদেজা-কুলদীপের স্পিন জুটি দিয়ে। তাই ভারতের হাতে ষষ্ঠ বোলারের বিকল্প না থাকা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায় ক্রিকেটমহলে।
কোচ দ্রাবিড় এক্ষেত্রে মজা করেই জানিয়েছিলেন যে, তাঁদের হাতে বিরাট কোহলির মতো একজন মিডিয়াম পেসারের বিকল্প রয়েছে। তাছাড়া সূর্যকুমার যাদব-শ্রেয়স আইয়ারও ষষ্ঠ বোলার হিসেবে হাত ঘোরাতে পারেন বলে হালকা চালে মন্তব্য করেন টিম ইন্ডিয়ার হেড কোচ।
দ্রাবিড়ের মজার ছলে বলা কথাগুলি যে সত্যি প্রমাণিত হবে, সেটা অনুমান করা যায়নি আগে থেকে। যথাযথ সুযোগ মিলতেই ভারত বিশ্বকাপের মঞ্চে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ব্যবহার করে বিরাট কোহলিকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, টিম ম্যানেজমেন্টকে হতাশ করেননি কোহলি। রবিবার চিন্নাস্বামীতে তিনি তুলে নেন নেদারল্যান্ডস দলনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের উইকেট।
ডাচদের বিরুদ্ধে নিয়ম রক্ষার ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ভারত ৪ উইকেটের বিনিময়ে ৪১০ রানের বিশাল ইনিংস গড়ে তোলে। পালটা ব্যাট করতে নেমে ২২ ওভারে ৩ উইকেটের বিনিময়ে মোটে ৯১ রান সংগ্রহ করে নেদারল্যান্ডস। এমন পরিস্থিতি থেকে আর যাই হোক, ডাচদের পক্ষে ম্যাচ জেতা সম্ভব নয় বুঝেই রোহিত শর্মা বল করতে ডাকেন বিরাট কোহলিকে। নিজের প্রথম ওভারে ৭ রান খরচ করেন কোহলি। যদিও সেই ওভারে ১টি বাউন্ডারি আসে সাইব্র্যান্ডের ব্যাটের কানা নিয়ে।
ইনিংসের ২৫তম ওভারে কোহলিকে পুনরায় বল করতে ডাকেন রোহিত। তৃতীয় বলে তিনি আউট করেন এডওয়ার্ডসকে। ২৪.৩ ওভারে কোহলির বলে লোকেশ রাহুলের দস্তানায় ধরা পড়েন ডাচ দলনায়ক। কোহলি সেই স্পেলে ৩ ওভার বল করে ১৩ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট নেন। সেই তিন ওভারের মধ্যে সব থেকে খারাপ যে ডেলিভারিটি করেন বিরাট, সেটিতেই তিনি উইকেট পেয়ে যান। বল ব্যাটে না লাগলে ওয়াইড হতো নিশ্চিত।
বিরাটের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাটের কানা লাগিয়ে বসেন এডওয়ার্ডস। দারুণ ক্যাচ ধরেন লোকেশ রাহুল। অভাবনীয়ভাবে উইকেট পাওয়ার পরে উচ্ছ্বাসে ভেসে যান কোহলি। গ্যালারিতে অনুষ্কার উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। কোহলি উইকেট পাওয়ার পরে গ্যালারিতে রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দেন কোহলির ঘরণী। বিরাটের অনুকরণে সেলিব্রেটও করতে দেখা যায় তাঁকে।
উচ্ছ্বসিত ছিল গোটা ভারতীয় দল। গ্যালারিতে দর্শকদের উদ্দীপনা ছিল আরও বেশি। ওয়ান ডে ক্রিকেটে কোহলির এটি পঞ্চম শিকার। তিনি শেষবার কোনও ওয়ান ডে ম্যাচে উইকেট পান ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ৭ ওভার বল করে ৩৬ রানের বিনিময়ে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের উইকেট তুলে নেন তিনি। অর্থাৎ, প্রায় ১০ বছর পরে ফের ওয়ান ডে ক্রিকেটে উইকেট নিলেন বিরাট।
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই নিয়ে ৯টি উইকেট নিলেন বিরাট। বিশ্বকাপে এটিই তাঁর প্রথম উইকেট। উল্লেখ্য, বিরাট এদিন ব্যাট হাতেও ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন। কোহলি ছাড়াও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে পার্টটাইমার হিসেবে বল করেন শুভমন গিল, সূর্যকুমার যাদব ও রোহিত শর্মা। ১টি উইকেট তোলেন রোহিতও।