মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে ফের দেখা দিল গঙ্গার ভয়ঙ্কর ভাঙন। সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নদীর পাড় ভেঙে গিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে উত্তর চাচণ্ড ও মধ্য চাচণ্ড গ্রাম। হঠাৎ রাতের অন্ধকারে ভাঙন শুরু হওয়ায় অনেক পরিবার ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ও হুড়োহুড়ির সৃষ্টি হয়। যদিও বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আগেই সকলে বেরিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: গঙ্গা ভাঙন রোধে ডিসেম্বরেই শুরু হবে কাজ, DPR জমা দিতে বলল ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, মাঝরাতে আচমকা মাটি ধসে পড়তে শুরু করে। কেউ কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও অনেকের বাড়ির আসবাবপত্র, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, এমনকি গবাদি পশুও গঙ্গায় ভেসে যায়। নদীতে ভেসে গিয়েছে বহু গাছপালা ও চাষের জমিও। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, গঙ্গার ধার ঘেঁষে থাকা একটি প্রাচীন কালী মন্দিরে বড়সড় ফাটল ধরা পড়েছে, যা এখন বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোনও মুহূর্তে সেটিও নদীতে তলিয়ে যেতে পারে।
ভাঙনের আতঙ্কে বহু পরিবার ইতিমধ্যেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে স্থানীয় আমবাগান বা আত্মীয়দের বাড়িতে চলে গিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই গ্রামজুড়ে মানুষ নিজের সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে সরে যেতে ব্যস্ত। গৃহহারা মানুষদের মুখে অসহায়তার সুর, ‘কোথায় যাব, কীভাবে বাঁচব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুর্গতদের জন্য জরুরি ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে এবং অস্থায়ী শিবির ও স্থানীয় একটি স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সামশেরগঞ্জের বিডিও সুজিত চন্দ্র লোধ জানিয়েছেন, এই ভাঙনে কয়েকটি বাড়ি সম্পূর্ণ তলিয়ে গিয়েছে। একটি মন্দির অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা চলছে। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই সামশেরগঞ্জ ও আশপাশের গ্রামগুলিতে গঙ্গার জল বৃদ্ধির ফলে বাঁধে ফাটল ধরেছে। প্রশাসন ও স্থানীয়রা ভাঙনের আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু সোমবার গভীর রাতের ঘটনায় সেই আশঙ্কা চরম সত্যে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত নদীর পাড় সংরক্ষণের জন্য স্থায়ী বাঁধ ও প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নিলে আরও অনেক পরিবার গৃহহারা হবে।