টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতিহাস তৈরি করল আফগানিস্তান। গায়ানায় ৮৪ রানে নিউজিল্যান্ডকে ধ্বংস করে দিলেন রশিদ খান, রহমানউল্লাহ গুরবাজরা। আর সেই জয়ের ফলে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফর্ম্যাটের বিশ্বকাপে এই প্রথমবার নিউজিল্যান্ডকে হারানোর স্বাদ পেল আফগানিস্তান। শুধু তাই নয়, পুরুষদের সিনিয়র পর্যায়ের ক্রিকেটে এই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে কিউয়িদের হারালেন আফগানরা। আজ প্রথমে ব্যাট করে আফগানরা ছয় উইকেটে ১৫৯ রান তোলেন। জবাবে ১৫.২ ওভারে ৭৫ রানে অল-আউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। চারটি করে উইকেট পান ফজলহক ফারুকি এবং রশিদ। দুটি উইকেট নেন মহম্মদ নবি। আর ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন গুরবাজ।
আফগানিস্তানের দুর্দান্ত বোলিং
তবে নিউজিল্যান্ডের সেই ঐতিহাসিক জয়ের ভিত্তিপ্রস্তরটা তৈরি করে দেন ফারুকি। ১৫৯ রানের পুঁজি রক্ষা করতে প্রথম বলেই নিউজিল্যান্ডের ওপেনার ফিন অ্যালেনের লেগ স্টাম্প ছিটকে দেন। কিউয়িরা সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ডেভন কনওয়ে এবং ডারিল মিচেলকে ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠিয়ে দেন ফারুকি। সেখানেই নিউজিল্যান্ডের মেরুদণ্ড পুরোপুরি ভেঙে যায়। তারপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি কিউয়িরা। পাওয়ার প্লে'র শেষে ৩৩ রানে তিন উইকেটে ধুঁকতে থাকেন।
আরও পড়ুন: T20 World Cup-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সুবিধা করে দিল কানাডা,গ্রুপ এ-তে দুইয়ে ভারত
তবে কিউয়িদের যা ব্যাটিং লাইন-আপ, তাতে সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন। সেই সুযোগটা অবশ্য দেননি অধিনায়ক রশিদ এবং নবি। তাঁদের স্পিনের জালে নাস্তানাবুদ হয়ে যান কিউয়ি ব্যাটাররা। ৩৩ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ৪৩ রানে পরপর দু'বলে পড়ে যায় পঞ্চম এবং ষষ্ঠ উইকেট। ৫৩ রানে সপ্তম উইকেট হারায়। ৫৯ রানে পড়ে যায় অষ্টম উইকেট। ৬৩ রান এবং ৭৫ রানে যথাক্রমে নবম এবং দশম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম উইকেটটা নিয়ে যিনি ঐতিহাসিক জয়ের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি করেন, সেই ফারুকিই শেষ উইকেটটা নেন।
আফগানিস্তানের ব্যাটিং ইনিংস
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু একেবারেই নিউজিল্যান্ডের মতো খেলতে দেখা যায়নি কিউয়িরা। তাঁদের সঙ্গে যে বিষয়টা একেবারে যায় না, সেটারও সাক্ষী থাকে গায়ানা। চূড়ান্ত বাজে ফিল্ডিং করেন কিউয়িরা। ফস্কান ক্যাচ। হাতছাড়া করেন রান-আউটের সুযোগ। আর সেইসব সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান।
প্রাথমিকভাবে ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরিদের সামলে পাওয়ার প্লে'তে বিনা উইকেটে ৪৪ রান তোলেন আফগানরা। তবে তারপর রানের গতি বাড়াতে পারেননি গুরবাজরা। ফলে বিনা উইকেটে আফগানিস্তান ১০০ রানের গণ্ডি পেরোলেও খুব একটা চাপে পড়েনি নিউজিল্যান্ড।
শেষপর্যন্ত ১৪.৩ ওভারে ১০৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। তারপর আজমাতুল্লাহ ওমরজাই ক্রিজে এসে আফগানিস্তানের রানের গতি কিছুটা বাড়ান। ১৩ বলে ২২ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। কিন্তু তিনি আউট হওয়ার পরে ধস নামে আফগানিস্তানের ইনিংসে। নবি, রশিদরা ব্য়াট হাতে একেবারেই দাগ কাটতে ব্যর্থ হন। শেষপর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ছয় উইকেটে ১৫৯ রান তোলে আফগানিস্তান।
সর্বোচ্চ ৫৬ বলে ৮০ রান করেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) তারকা গুরবাজ। পাঁচটি চার এবং পাঁচটি ছক্কা মারেন। ৪১ বলে ৪৪ রান করেন জাদরান। কিউয়িদের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন বোল্ট এবং হেনরি। বোল্ট চার ওভারে ২২ রান খরচ করেন। হেনরি চার ওভারে খরচ করেন ৩৭ রান। লকি ফার্গুসন একটি উইকেট নেন। সার্বিকভাবে ম্যাচের কয়েকটি মুহূর্তে ভালো করেন কিউয়ি বোলাররা। আবার বোলারদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্যাকটিকাল ভুলও করেন কিউয়ি অধিনায়ক কেন।