বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে আইপিএল প্লে অফের আরও কাছে গেল গুজরাট টাইটান্স। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে একটা সময় মনে হচ্ছিল দুই দলের কাছেই সমান সুযোগ রয়েছে জেতার, শেষ দিকের বুমরাহর স্পেলটাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছিল। তবে খেলা পুরো ২০ ওভার হল না। বৃষ্টির জন্য গুজরাটের ইনিংসে ১ ওভার কম হয়। তাঁদের ২০ ওভারে টার্গেট ছিল ১৫৬, তবে খেলা যখন বষ্টির পর শুরু হয় তখন গুজরাটের স্কোর ছিল ১৮ ওভারে ৬ উইকেটে ১৩২। সেখান থেকে DLS নিয়মে ১ ওভারে ১৫ রান ধার্য করা হয়, অর্থাৎ টার্গেট দাঁড়ায় ১৯ ওভারে ১৪৭। সেই সুবাদেই গুজরাট খেলায় ফিরে আসে। ম্যাচের শেষ বলে হার্দিক পাণ্ডিয়া যদি ডাইরেক্ট হিট করতে পারতেন তাহলে খেলা সুপার ওভারে গড়াতে পারত, কিন্তু সেটা তিনি মিস করতেই ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিল গুজরাট।
ওয়াঙ্খেড়ে স্টেডিয়ামে যেমন পারফরমেন্স আশা করা হয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তরফ থেকে তেমন পারফরমেন্স ব্যাট হাতে দেখাতে পারলেন না রোহিত শর্মারা। দুই ওপেনারই এবারে চূড়ান্ত ব্যর্থ হলেন। চার ওভার শেষের আগেই দলের দুই ওপেনার প্যাভিলিয়নে ফেরেন মহম্মদ সিরাজ এবং আর্শাদ খানের দুরন্ত স্পেলের সুবাদে।
এরপর এসে সূর্যকুমার যাদব এবং উইল জ্যাকস খেলা ধরেন। এদিন ২৪ বলে ৩৫ রান করে এবারের আইপিএল ২০২৫-এ অরেঞ্জ ক্যাপের তালিকায় প্রথম স্থানে উঠে এলেন সূর্য। উইল জ্যাকস করেন ৩৫ বলে ৫৩ রান। এই দুই ক্রিকেটার মিলে ৭১ রানের পার্টনারশিপ তোলেন। ১১ ওভারের মধ্যে ১০০র কাছাকাছি স্কোর চলে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল মুম্বই বড় রানের দিকেই এগোবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হল না।
এরপর পর নিয়মিত ব্যবধানে আউট হতে থাকলেন তিলক বর্মা, হার্দিক পাণ্ডিয়া, নমন ধিররা। শেষদিকে কর্বিন বশ ২২ বলে ২৭ রান না করলে হয়ত মুম্বইয়ের স্কোর ১৫০র গণ্ডিও টপকাত না। কোনও মতে ৮ উইকেটে ১৫৫ রান তোলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, যদিও ওয়াংখেড়েতে সেই রান কখনই খুব একটা যে ভালো স্কোর ছিল না হোম টিমের জন্য, সেকথা বলাই বাহুল্য। ম্যাচে সাই কিশোর ২ উইকেট নেন, বাকি সব গুজরাটের বোলারই একটি করে উইকেট নেন। ম্যাচে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেন জোস বাটলার। অনবদ্য ঢংয়ে তিনি রান আউট করেন বশকে।
জবাবে বোলিং করতে নেমে শুরুতেই মুম্বই ধাক্কা দেয় গুজরাট টাইটান্সের ওপেনার সাই সুদর্শনকে ফিরিয়ে। ট্রেন্ট বোল্ট নিজের প্রথম ওভারে বল করতে এসেই পাঁচ রানে ফেরান সুদর্শনকে। এরপর জোস বাটলার এবং শুভমন গিল নিজেদের মধ্যে পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। ২৭ বলে ৩০ রান করে যখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন জোস বাটলার, তখনই তিনি অশ্বিনী কুমারের ওভারে আউট হয়ে যান।
এরপর শুভমন গিল আইপিএল ২০২৫-র প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ৫০০ রানের গণ্ডি টপকে যান। প্রসঙ্গত এবারের আইপিএলে গুজরাটের টপ অর্ডারের প্রথম তিন ব্যাটার সাই সুদর্শন, শুভমন গিল এবং জোস বাটলার, তিনজনই ৫০০ রানের ক্লাবে ঢুকে পড়েছেন। কিন্তু এরই মাঝে বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ১৪ ওভারে পর খেলা থেমে যায়, আর তারপরই ছন্দ নষ্ট হয় গুজরাটের ব্যাটারদের। ৪৩ রানে আউট হন গিল, ১৫ বলে ২৮ রানে আউট হন রাদার্ফোর্ড। বুমরাহ দুরন্ত বোলিংয়ে ফেরান গিলকে। ক্লিন বোল্ড হয়ে যান গুজরাটের অধিনায়ক, অন্যদিকে রাদার্ফোর্ডকে আউট করেন বোল্ট। নিজের চার ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন বোল্ট।
এরপর হার্দিক কোনওরকম ঝুঁকি না নিয়েই দলের সেরা বোলার জসপ্রীত বুমরাহকে দিয়ে ১৬তম ওভারটি করতে দেন, আর সেখানেই শাহরুখ খানকে ক্লিন বোল্ড করে মুম্বইকে আরও মজবুত জায়গায় বসিয়ে দেন বুমরাহ। চার ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন তিনি। এরপরের ওভারে অশ্বিনী কুমার আউট করেন রশিদ খানকে। ১৮ ওভারের শেষে গুজরাটের স্কোর দাঁড়ায় ১৩২,কিন্তু DLS-এ দরকার ছিল ১৩৭, ফলে তাঁরা পিছিয়ে পড়ে ৫ রানে।
এরপর বৃষ্টির শেষে ১২.৩০টায় খেলা শুরু হয়। তখন ডিএলএস মেথডে ১ ওভারে ১৫ রান টার্গেট দেওয়া হয় গুজরাটকে, অর্থাৎ ১৯ ওভারে ১৪৭ রানের টার্গেট। সেখানেই বোলিং করতে আসেন মুম্বইয়ের দিপক চাহার। এদিকে ম্যাচের সময় মাঠ থেকে কভার্স সরানো, জল শুকানো নিয়ে সমস্যা দেখা যায়। গুজরাটের স্টাফ, ক্রিকেটাররা এসে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন, তাঁদের মনে হচ্ছিল যে মুম্বইয়ের হোম গ্রাউন্ড হওয়ায় আর মুম্বই এগিয়ে থাকায় গ্রাউন্ড স্টাফরা আর ম্যাচ শুরু করতে চাইছিলেন না, অর্থাৎ আম্পায়ারের সঙ্গেও অসহযোগিতা করছিলেন বলে তাঁদের মনে হয়।
এদিকে শেষ ওভারের প্রথম বলেই দীপক চাহারকে চার মারেন রাহুল তেওয়াতিয়া। এরপরের বলে তিনি সিঙ্গল নেন। তৃতীয় বলে ছয় মারেন জেরাল্ড কোয়েটজি। চতুর্থ বলে তিনি সিঙ্গল নিলেও তা নো বল হয়। এরপর চতুর্থ বলে রাহুল এক রান নেন মিড উইকেটের দিকে। পঞ্চম বলে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান কোয়েটজি, ফলে শেষ বলে ১ রান দরকার ছিল জেতার জন্য, নাহলে ম্যাচ সুপার ওভারে গড়াতে। সেখানেই আর্শাদ খান নেমে মিড অফের দিকে বল খেললে সেটা সরাসরি চলে যায় হার্দিকের কাছে। তিনি বোলারকে বল থ্রো করলেও সহজে রান আউট হতে পারত, কিন্তু ডাইরেক্ট হিট করতে গিয়ে মিস করতেই রান সম্পূর্ণ করে নেন আর্শাদ। শেষ বলে দিয়েই টানটান থ্রিলারে ম্যাচ জিতে ১৬ পয়েন্টে পৌঁছে গেল গুজরাট টাইটান্স।শেষদিকে রাহুলের ৮ বলে ১১ রান আর কোয়েটজির ৬ বলে ১২ রানের ইনিংসটাই মূলত পার্থক্য গড়ে দিল।