তিনটি আইসিসি শিরোপা জয়ী প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি আইসিসি হল অব ফেম-এ জায়গা পেলেন। সোমবার আইসিসি হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি, যিনি দেশের হয়ে তিনটি আইসিসি শিরোপা জিতিয়েছেন। ১৬ বছরের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ধোনি ৫৩৮টি ম্যাচ খেলেছেন, সব ফরম্যাট মিলিয়ে করেছেন ১৭,২৬৬ রান এবং ৮২৯টি ডিসমিসাল (আউট করানো) করেছেন।
আইসিসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘চাপের মুহূর্তে অতুলনীয় শান্ত মানসিকতা ও চমৎকার কৌশলী নেতৃত্বের জন্য প্রশংসিত ধোনি সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে পথপ্রদর্শকের ভূমিকাও পালন করেছেন। দারুণ ফিনিশার, অধিনায়ক ও উইকেটকিপার হিসেবে তাঁর যে অবদান, সেটাই আইসিসি হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়েছে।’
এই সম্মাননা পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ধোনি বলেন, তিনি যে ১১তম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় জায়গা পেলেন, তা আজীবন মনে রাখবেন।
ধোনি বলেন, ‘আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পাওয়া আমার জন্য বিরাট সম্মানের। এটা এমন একটি সম্মান, যা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। এত কিংবদন্তিদের সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়ে যাওয়া অসাধারণ অনুভূতি – আমি এই সম্মান আজীবন লালন করে রাখব।’
আইসিসি হল অব ফেম ২০২৫-এ মোট সাতজন ক্রিকেটারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—এর মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্যাটার ম্যাথিউ হেইডেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলাও এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন।
ধোনির ভারতীয় দলে অবদান: এক নজরে
২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মহেন্দ্র সিং ধোনির। প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে মাঠ ছাড়লেও খুব শিগগিরই নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। ২০০৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশাখাপত্তনমে ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে উঠে এসে মাত্র ১২৩ বলে ১৪৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে নজর কাড়েন।
২০০৭ সালে তরুণ ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব পান ধোনি—যে দলে তখন ছিলেন না সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা রাহুল দ্রাবিড়ের মতো অভিজ্ঞরা। সকলকে চমকে দিয়ে ধোনির নেতৃত্বে ভারত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়, ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে।
টেস্ট ক্রিকেটেও ধোনির অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর নেতৃত্বে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ভারত প্রথমবার আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে উঠে আসে। নিজেও একাধিক স্মরণীয় ইনিংস উপহার দেন – যেমন, তাঁর পঞ্চম টেস্টেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস এবং ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চেন্নাই টেস্টে ক্যারিয়ারসেরা ২২৪ রান।
তবে ওয়ানডে ফরম্যাটেই ধোনির সবচেয়ে বড় প্রভাব দেখা গেছে। ২০১১ সালে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভারতকে বিশ্বকাপ জেতান তিনি। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর সেই বিখ্যাত ছক্কা—ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে—আজও ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত। এরপর ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে সবকটি বড় আইসিসি ট্রফি জেতা প্রথম অধিনায়ক হন ধোনি।
ধোনির শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর ২০২০ সালে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান। তবে এখনও আইপিএলে সক্রিয় রয়েছেন ধোনি, নেতৃত্ব দিচ্ছেন চেন্নাই সুপার কিংসকে।