তেম্বা বাভুমাকে ‘অবমাননার’ অভিযোগ, পাকিস্তানকে ‘ক্ষমা চাইতে’ বলা হল, WTC ফাইনালের মাঝেই ফের আলোচনায় ভাইরাল ভিডিয়ো। যখন গোটা ক্রিকেটবিশ্ব এদিন মার্করামের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি এবং আহত হ্যামস্ট্রিং নিয়েও তেম্বা বাভুমার বীরোচিত হাফ-সেঞ্চুরির প্রশংসায় ব্যস্ত। এই সময়ে একাংশ ক্রিকেটপ্রেমী পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে তীব্রভাবে সমালোচনা করল। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বাভুমার প্রতি ‘অসম্মানজনক আচরণ’ করার জন্য পাকিস্তানকে ‘ক্ষমা চাওয়ার’ দাবি জানান হচ্ছে। কিন্তু কেন? পাকিস্তানের তো কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচই নেই এই মুহূর্তে, তাহলে হঠাৎ কেন বাভুমার দুর্দান্ত ইনিংসের সময় পাকিস্তানকে নিশানা করা হচ্ছে?
এর উত্তর লুকিয়ে আছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে করাচিতে যা ঘটেছিল, সেই ঘটনা সংক্রান্ত। তখন চলছিল এক ত্রিদেশীয় সিরিজ — পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। সেই সিরিজের শেষ লিগ ম্যাচে রানআউট হয়ে ফেরার সময় পাকিস্তান ক্রিকেটাররা যেভাবে বাভুমাকে বিদায় জানিয়েছিল, তা ছিল চূড়ান্ত অশালীন।
২৯তম ওভারে, ৮২ রানে ব্যাট করছিলেন বাভুমা। অফ সাইডে একটি বল ঠেলে দিয়ে দ্রুত সিঙ্গেলের চেষ্টা করেন। ব্যাটিং পার্টনার ম্যাথিউ ব্রিটজকে শুরুতে সাড়া দিলেও শেষ মুহূর্তে থেমে যান, আর মাঝপথেই থেমে যেতে হয় বাভুমাকে। সৌদ শাকিল বল ধরে সরাসরি স্টাম্প ভেঙে দেন। বাভুমা ক্রিজে ফিরতেই পারেননি। ১১৯ রানের জুটি ভাঙে দক্ষিণ আফ্রিকার।
আউটের পর পাকিস্তানি ফিল্ডার কামরান গুলাম বাভুমার সামনে এসে হইচই করতে থাকেন, সঙ্গে যোগ দেন শাকিল ও আঘা সলমন। বাভুমাকে তখন থেমে দাঁড়াতে হয়, কারণ তার পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পরে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা সরে গেলে তিনি মাঠ ছাড়েন। ঘটনা ভালোভাবে নেননি ম্যাচ আম্পায়াররাও। সঙ্গে সঙ্গে তারা মহম্মদ রিজওয়ানকে ডেকে পাঠান এবং দীর্ঘ আলোচনা হয় মাঠেই।
সমর্থকদের ক্ষোভ ও ‘ক্ষমা চাওয়ার’ দাবি
বাভুমার সঙ্গে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের এমন আচরণ নেটমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়। এবং দেখা যাচ্ছে, সেই ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হয়নি। সেই বিতর্কিত ভিডিয়োটি ফের ভাইরাল হয়েছে শুক্রবার, WTC ফাইনালের দিনে।
এদিকে, বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে টান নিয়েও বাভুমা ও ওপেনার মার্করাম দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। অসাধারণ ব্যাটিং কন্ডিশনে তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৪৩ রানের জুটি গড়েন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম WTC শিরোপার খুব কাছাকাছি নিয়ে যান। ২৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা তৃতীয় দিনের শেষে ২১৩/২ — জয় থেকে মাত্র ৬৯ রান দূরে।
বাভুমা ১২১ বলে ৬৫ রানে অপরাজিত ছিলেন, যদিও দৌড়ে সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে ব্যাটিংয়ে কোনও ঘাটতি ছিল না। আর মার্করাম ১৫৯ বলে ১০২ রানে অপরাজিত, ফাইনালের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। অস্ট্রেলিয়া তাদের চারজন সেরা সর্বকালের টেস্ট বোলারকে নিয়ে আক্রমণ করলেও, দক্ষিণ আফ্রিকার এই জুটিকে ভাঙতে পারেনি, এমনকি সেভাবে চাপে ফেলতেও পারেনি।
তবে এখনও নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছে না প্রোটিয়ারা। কারণ, আইসিসি টুর্নামেন্টে জয়ের মুখ থেকে হেরে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার পুরুষ দলের। ১৯৯৮ সালের আইসিসি নকআউট ট্রফি ছাড়া আর কোনও ICC শিরোপা নেই তাদের।
একদিকে যখন বাভুমার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে, অন্যদিকে পুরনো এক বিতর্ক ফের সামনে এনে পাকিস্তানের আচরণের সমালোচনা করছেন ভক্তরা। পাকিস্তান দল কী এই সমালোচনার জবাব দেবে, না কি নিঃশব্দেই কাটিয়ে যাবে, সবটাই এখন দেখার।