মেট্রোরেল হোক কিংবা বিমান সংস্থা। আবার কখনও বিদেশে মোটা বেতনের চাকরি। শহরে নানা ধরনের চাকরির টোপ দিয়ে ফাঁদ পাতছে প্রতারকরা। সেই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে ফেলছেন চাকরিপ্রার্থীরা। আবার বেশিরভাগ টাকা খোঁয়াচ্ছেন ‘টেক স্যাভি’ যুবক—যুবতিরা। কারণ, এখন এমন ভূয়ো ওয়েবসাইট খুলে মোটা বেতনের লোভনীয় চাকরির টোপ দিচ্ছে প্রতারকরা। যে কোনটা আসল কি নকল, সেই তফাত বুঝতে পারছেন না—চাকরিপ্রার্থীরা। বেকাররা যাতে এমন ভূয়ো চাকরির ফাঁদে পা না—দেন, এবার সেই বিষয়ে সতর্ক করল লালবাজার।গত এক মাসের মধ্যে বেসরকারি সংস্থায় চাকরির টোপে টাকা খুইয়েছেন বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। আবার এক মাসেই পুলিশের তৎপরতায় বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ জন প্রতারককে।সরকারি দফতরে চাকরির নামে জালিয়াতির বিষয়ে আগের চেয়ে এখন অনেকটাই সতর্ক হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। পুলিশের ধারণা, সেই কারণেই ‘লাইন পাল্টেছে’ প্রতারকেরা। এখন আর সরকারি চাকরি নয়, বেসরকারি সংস্থার নামে চাকরির ফাঁদ পাতছে জালিয়াতরা।কম্পিউটারের পর্দায় কখনও লোভনীয় বিজ্ঞাপন ভেসে উঠছে। আবার কখনও এসএসএস বা হোয়াটস অ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে জাল পাতছে চক্রের চাঁইরা। জালিয়াতরাও চাকরির ভুয়ো ওয়েবসাইট খুলে টোপও দিচ্ছে। সেই ভুয়ো ওয়েবসাইট আসল বলে মনে করে জালিয়াতদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এমন নিখুঁত ভূয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে, চাকরিপ্রার্থীরা বুঝতেই পারছেন না যে, কাদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করছেন। একবার সেখানে আবেদন করলেই, বিভিন্ন খাতে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে। পুলিশের ধারণা, চাকরির আশায় থাকা বহু যুবক ও যুবতী বুঝতে পারছেন না যে, চাকরির কোন ওয়েবসাইটটি আসল, আর কোনটি ভূয়ো।এই ব্যাপারে লালবাজারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাধারণভাবে দেখা গিয়েছে, আসল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চাকরির আবেদন করলে, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয় না। কিন্তু যারা ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে, তাদের লক্ষ্য থাকে টাকা আদায় করা। সেই কারণে, সিকিউরিটি ডিপোজিট, মেডিক্যাল পরীক্ষা সহ— আরও বিভিন্ন খাতে জালিয়াতরা টাকা চাইতে শুরু করে। কয়েক লাখ টাকা আদায়ের পর চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তারা। পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরেই কলকাতায় ফাঁদ পেতেছে চাকরির জালিয়াতি চক্র। চক্রগুলি আলাদা আলাদা হলেও তাদের জালিয়াতির পদ্ধতি অনেকটা এক। মূলত অনলাইনেই জাল ওয়েবসাইট তৈরি করে ফাঁদ পাতা হয়। আসলের মতোই দেখতে ওই জাল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বলা হয়, যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন নামী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পাওয়া যাবে।পুলিশ আধিকারিকরা দেখেছেন, চাকরিপ্রার্থীরা যোগাযোগ করার পর তাঁদের ‘ইন্টারভিউ’ নেওয়া হয়। কখনও ফোনে, আবার কখনও বা অনলাইনেই ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। এর পরই চাকরিপ্রার্থীদের জানানো হয় যে, তাঁরা চাকরি পেতে পারেন। তার জন্য তাঁদের টাকা দিতে হবে। বেশ কয়েক দফায় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রত্যেকটি ঘটনায় পুলিশ আধিকারিকরা দেখেছেন, অনলাইনে অথবা হাতে হাতে বেসরকারি সংস্থার ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। সেগুলি নিয়ে চাকরিতে যোগদান অথবা খোঁজখবর নিতে গিয়েই চাকরিপ্রার্থীরা দেখেন যে, সেগুলি জাল।লালবাজারের ওই আধিকারিকের পরামর্শ, কোনও চাকরির ওয়েবসাইট যদি কারোর কাছে টাকা চাইতে থাকে, চাকরিপ্রার্থীরা যেন একেবারেই টাকা না—দেন। বা তাঁদের সঙ্গে ফোনে কেউ এব্যাপারে যোগাযোগ করলেও যেন তারা তা এড়িয়ে চলেন।