নদিয়ার কালীগঞ্জে তৃণমূলের বিজয়মিছিল থেকে বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে এক ১০ বছরের নাবালিকার। ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজ্যজুড়ে। ঘটনার পরই একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মূল অভিযুক্তদের মধ্যে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চার জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কালীগঞ্জে TMC-র বিজয় মিছিল থেকে বোমা, মৃত্যু নাবালিকার, কড়া নির্দেশ মমতার
মঙ্গলবার সকালে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে জানানো হয়, তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আরও তিন মূল অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ধৃতদের নাম আদর শেখ, মানোয়ার শেখ, কালু শেখ ও আনোয়ার শেখ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। মঙ্গলবারই তাদের আদালতে পেশ করা হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার ছিল কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ভোটগণনার দিন। গণনার ফল স্পষ্ট হতেই শাসকদলের তরফে বিজয় মিছিল শুরু হয়। অভিযোগ, সেই মিছিল থেকেই একটি বোমা ছোড়া হয় স্থানীয় এক সিপিএম কর্মীর বাড়ির দিকে। বিস্ফোরণের শিকার হয় বছর দশেকের তামান্না খাতুন, সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনাস্থল বড় চাঁদঘর পঞ্চায়েতের মোলান্দি গ্রাম পঞ্চায়েত। নিহত তামান্নার মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, তাঁরা সিপিএম করেন। যারা বোমা ছুড়েছে তাদের মুখ চেনেন। কিন্তু নাম জানেন না। সবাই তৃণমূলের লোক।
এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয়েছে। বিজেপি সাফ ভাষায় বলেছে, রক্তপাত ছাড়া তৃণমূল জিততে জানে না! তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। ঘটনার দিন বিকেলেই একটি পোস্ট করে তিনি জানান, দোষীদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেন। একই সুরে কথা বলেন জয়ী তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদও। তাঁর কথায়, এটা মর্মান্তিক ঘটনা। যারা এই ঘটনার পেছনে রয়েছে, তারা কঠিন শাস্তি পাবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীগঞ্জের ওই অঞ্চলে ২০২৩ সাল থেকেই দুই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। কৃষ্ণনগরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, এই সংঘর্ষ সেই পুরনো দ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। তিনি আরও জানান, ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করতে ফরেনসিক ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে। সেগুলি হাতে এলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। নাবালিকার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় বাকি কেউ জড়িত কি না, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। নিহতের পরিবার এখন শুধুই চায় সুবিচার।