রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে পরিচালিত ‘যোগ্যশ্রী’ প্রকল্পে এবার পরিবর্তন আসছে। এতদিন পর্যন্ত তফসিলি জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এবার সেই নিয়ম পাল্টে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে চলতি বছর থেকেই এই প্রকল্পের সুযোগ মিলবে সাধারণ পড়ুয়াদের জন্যও, শুধু মাত্র অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হলেও চলবে। এককথায়, যোগ্যশ্রী প্রকল্পর মাধ্যমে আরও পড়ুয়া সুযোগ পাবে।
আরও পড়ুন: মমতার ‘যোগ্যশ্রী’-তে পড়ে IIT-তে সুযোগ ১৩ জনের! এবার ফ্রি'তে কোচিং জেনারেলদেরও
প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল মেধাবী অথচ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের দেশের সেরা প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া। তাতে যে ফল মিলেছে, তা চোখে পড়ার মতো। ২০২৪ সালে যোগ্যশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে আইআইটিতে সুযোগ পেয়েছে ১৫ জন, এনআইটিতে ২০ জন এবং সর্বভারতীয় স্তরের মেডিক্যাল পরীক্ষায় (নিট) উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ জন পড়ুয়া। গত তিন বছরের হিসেবে, প্রকল্পের সহায়তায় ৩৬ জন পৌঁছেছে আইআইটি-তে, ১৯০ জন জয়েন্ট এন্ট্রান্সে সফল, ৩৪৩ জন পেরিয়েছে নিট-এর গণ্ডি এবং ১৪২৪ জন রাজ্য জয়েন্টে যোগ্যতা অর্জন করেছে।
এতদিন এই সুবিধা পেতে হলে পড়ুয়াকে তফসিলি জাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের হতে হতো। তবে এবার থেকে আর্থিক সীমা পূরণ করলেই, এই প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে। শর্ত হল, মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর থাকতে হবে এবং পরিবারের বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকার কম হতে হবে।
এই প্রকল্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের। প্রতি বছর ৩৫০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ চালু থাকে। যার মধ্যে ৩২০ ঘণ্টা ক্লাস এবং বাকি ৩০ ঘণ্টা পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ। প্রতি সপ্তাহে শনিবার (স্কুল ছুটির পরে) ও রবিবার প্রশিক্ষণ হয়, প্রতিটি জেলায় নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে। রাজ্যজুড়ে এই মুহূর্তে প্রায় ৫০টি কেন্দ্র এই প্রশিক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। দফতরের পক্ষ থেকে একাধিক নামী কোচিং সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাঠ্যসামগ্রী ও রেফারেন্স বই সরবরাহ করা হয়। পড়ুয়াদের সমস্ত বই বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এছাড়া, প্রশিক্ষণকালীন সময়ে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে ভাতাও দেওয়া হয় প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে।
এই প্রকল্পের প্রোজেক্ট অধিকর্তা অমিতকুমার কর জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এবার সাধারণ পড়ুয়ারাও এর সুযোগ পাবেন। সেই অনুযায়ী সমস্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। চলতি বছরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে প্রায় ২ হাজার পড়ুয়াকে। প্রাইভেট কোচিং-এর খরচ অনেক ছাত্রছাত্রীর কাছেই দুর্লভ, সেখানে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প নিঃসন্দেহে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য এক বড় সুযোগ। এবার সেই সুযোগ মিলবে আরও অনেকের হাতের নাগালে।