কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের চেম্বারের বাইরে উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ যেভাবে ঘেরাও করেন ও বিক্ষোভ দেখান, তাতে উচ্চ ক্ষুব্ধ আদালত। বিষয়টি তাঁর নজরে আনা হতেই এ নিয়ে কড়া মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তিনি স্পষ্ট বলেন, 'এটা সহ্য করা যায় না'।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে যে অতিরিক্ত বা সুপারনিউমেরারি পদ সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, সেই সংক্রান্ত মামলার জেরেই প্রবীণ বাম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের চেম্বার ঘেরাও করে তাঁকে হেনস্থা করা হয়। এই ঘটনা ঘটে গত শুক্রবার। খবরে প্রকাশ, বিক্ষোভকারীরা উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য বা অভিযোগ ছিল, ইতিমধ্যেই সুপারনিউমেরারি পদ নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু, তারপরও কলকাতা হাইকোর্টে উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট মামলার তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি। কেন এই দেরি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চাকরিপ্রার্থীদের ওই অংশ। এমনকী, এই ঘটনায় তাঁরা বিচারপতির সঙ্গে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের আঁতাঁত রয়েছে বলেও গুরুতর অভিযোগ করেন।
গত শুক্রবারের সেই ঘটনাতেই আজ (সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫) মামলা রুজু করার আবেদন জানানো হয় হাইকোর্টে। আইনজীবী ফিরদৌস শামিম, কল্লোল বসু এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্ত ক্রিমিনাল কন্টেম্পট অর্থাৎ অপরাধমূলক ধারায় মামলা রুজু করতে চেয়ে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসের দ্বারস্থ হন। সেই আবেদন শোনার সময়েই বিচারপতি বসু বলেন, 'এমন ঘটনা একেবারেই সহ্য করা যায় না'। কিন্তু, যেহেতু গোটা বিষয়টি প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণে রয়েছে, তাই মঙ্গলবার ফের আবেদন করার নির্দেশ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষা বিভাগে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়। সেই প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত। সেই মামলায় গত শুক্রবার লিখিতভাবে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দেয় আদালত। রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ওই অতিরিক্ত শূন্যপদ কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল? এবং কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? তা লিখিতভাবে সরকার পক্ষকে আদালতে জানাতে হবে। যদিও, এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে সিবিআই তদন্ত যে হচ্ছে না, সেটাও কলকাতা হাইকোর্ট উল্লেখ করে।
কিন্তু, শুক্রবার আদালত রাজ্য সরকারকে সংশ্লিষ্ট নির্দেশ দিতেই অশান্তি শুরু হয়। তার জেরেই বিকাশরঞ্জনের চেম্বার ঘেরাও করা হয় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বর্ষীয়ান আইনজীবী নিজে বলেছেন, 'যাঁরা লড়াই করে আইন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই শাসকদল দুর্নীতির পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁদের লেলিয়ে দিচ্ছে!'