আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনী ব্লকের রায়মাটাং চা–বাগানের জলাশয়ে পড়ে গেল চিতাবাঘ। আর সেখানে পড়ে গিয়ে জলে হাবুডুবু খাচ্ছিল চিতা। কিছুতেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিল না। এই অবস্থায় রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ রায়মাটাং চা–বাগানের ওই সেচের জলাশয়ে একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘকে পড়ে থাকতে দেখতে পান এলাকার কয়েকজন বাসিন্দারা। ওই বাসিন্দাদের বয়ান অনুযায়ী, চিতাবাঘটি জলাশয়ে পড়ে ছটফট করছিল। বের হতে পারছিল না। তখন স্থানীয় বাসিন্দারাই একটি গাছের ডালের সাহায্যে চিতাবাঘটি উদ্ধার করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু সেটাও বিফলে যায়। কারণ সেচের ওই জলাশয়টি অনেকটা বড়, নিচু এবং গভীর। তাই চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করতে সফল হননি স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে খবর দেওয়া হয় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনকর্মীদের। ওই খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ সেখানে হাজির হয়ে যান বনকর্মীরাও। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছে চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করতে নানা চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন তাঁরা। এমনকী জলাশয়ে থেকে ওই চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করতে তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে যায়। কিন্তু সময় যদি বেশি অতিবাহিত হয় তাহলে জলাশয় থেকে বের হতে না পেরে মৃত্যু হবে চিতার।
আরও পড়ুন: সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে পাতালপথে বিভ্রাটের অভিযোগ, ভোগান্তির শিকার নিত্যযাত্রীরা
এই আশঙ্কাও কাজ করতে থাকে বনকর্মীদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ে বন দফতরের কাছে থাকা জাল দিয়ে চিতাটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন বনকর্মীরা। কিন্তু তাতেও যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয় বন কর্মীদের। কারণ ওই চিতা কিছুতেই জালে উঠতে চাইছিল না। অথচ নিজের প্রাণ বাঁচাতে লাগাতার কয়েক ঘণ্টা ধরে ছটফট করছিল। তারপর ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। কিছুতেই যখন হচ্ছিল না তখন চিতাটি বন দফতরের ফেলা জালকেই বাঁচার জন্য আঁকড়ে ধরে। ব্যস, তখনই বনকর্মীরা চিতাকে জাল ধরে টেনে জলাশয়ের উপরে নিয়ে আসে। কিন্তু বনকর্মীরা লেপার্ডের আক্রমণের বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন।
কিন্তু সে কোনও আক্রমণ করেনি। কারণ ক্লান্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় তার শক্তি ক্ষয় হয়েছিল। তাই চিতাটি জলাশয় থেকে ওপরে উঠে এসেই জঙ্গলের দিকে ছুটে পালিয়ে যায়। প্রাণ বাঁচে চিতার। আতঙ্ক থেকে রেহাই পায় মানুষজন। আর টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করে চিতাটিকে উদ্ধার করতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বনকর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ, সোমবার সকালে এই ঘটনা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাজারে গ্রামবাসীরা এই আলোচনায় মশগুল।