তৃণমূল কংগ্রেসের বহিষ্কৃত নেতা শেখ শাহজাহানের সৌজন্যে যে সন্দেশখালি সাম্প্রতিক অতীতে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল, এবার সেই জায়গাতেই রাজ্যের শাসকদলের অস্বস্তি বাড়ালেন স্থানীয় দুই নেতা। তাঁদের একজন তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি এবং অন্যজন দলেরই টিকিটে ভোটে জেতা বিধায়ক! একজন অন্যজনকে বললেন - 'অসভ্য, নির্লজ্জ'। জবাবে অন্যজন পালটা প্রথমজনকে বললেন - 'ক্রিমিনাল'!
এই আকচাআকচি সামনে আসে গতকাল (রবিবার - ২৭ এপ্রিল, ২০২৫)। ওই দিন দলীয় একটি সভার মঞ্চ থেকে দলেরই নেতা তথা সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতকে বেলাগাম আক্রমণ করতে শোনা যায় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি আবদুল কাদের মোল্লাকে। রবিবার সন্দেশখালির হাটগাছা এলাকায় ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট বিধায়ক একজন স্কুল শিক্ষক। তা সত্ত্বেও তাঁর নৈতিকতা ও সততা নিয়েই কার্যত সরাসরি প্রশ্ন তোলেন আবদুল কাদের মোল্লা। প্রশ্ন তোলেন সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতর রুচিবোধ এবং হঠাৎ ধনী হয়ে ওঠা নিয়েও! বিধায়কের উদ্দেশে খোলা মঞ্চ থেকেই একের পর এক বাক্যবাণ ছুড়তে থাকেন তিনি।
দলীয় বিধায়ককে নিশানা করে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বলেন, 'বিধায়কের বইমেলায় অল্প কয়েকটা বই আর শুধু জুয়া আর মদের আড্ডা।' তাঁর মতে, সন্দেশখালির বিধায়ক আদতে 'অসভ্য, নির্লজ্জ'!
তবে, এখানেই থামেননি কাদের। বিধায়কের বিরুদ্ধে রীতিমতো হুমকির সুরে তিনি বলেন, 'বিধায়ক স্কুলশিক্ষক। তাই স্কুলের মাইনে নিচ্ছেন। পাশাপাশি বিধায়ক হিসাবে আর্থিক সুযোগ সুবিধাও নিচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।... তোমার বাহাদুরি ছাড়িয়ে দেব!'
এই প্রেক্ষিতেই বিধায়কের আর্থিক বাড়বাড়ন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ওই অঞ্চল সভাপতি। তাঁর দাবি, '২০১৩ সালে যখন প্রধান ছিলেন, তখন ভাঙা দরজা-জানালা ছিল। এখন ২২ লাখ টাকার গাড়ি, সারা বাড়িতে এসি লাগানো!'
এদিকে, এই সমস্ত কথা কানে যাওয়ার পর চুপ করে বসে থাকেননি বিধায়ক সুকুমার মাহাতও। তিনি পালটা বলেন, 'আবদুল কাদের মোল্লা একজন ক্রিমিনাল। সন্দেশখালির ভাঙিপাড়ায় যে তিনজন খুন হন, তার মূল আসামি এই আবদুল কাদের মোল্লা। এরা শেখ শাহজাহানের শাগরেদ!'
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো আরও দাবি করেন, 'ওদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছি বলে এমন মন্তব্য করছে।' তিনি জানিয়েছেন, গোটা ঘটনা দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
এদিকে, অন্দরের এই কোন্দল এভাবে এভাবে বাইরে চলে আসায় স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। বছর ঘুরলেই ভোট হবে এ রাজ্যে। সেই প্রেক্ষাপটে ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদের ওয়াকফ হিংসার জেরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যের শাসকদলকে। এই অবস্থায় যদি গোষ্ঠীকোন্দলও এভাবে তীব্র হয়, তাতে জোড়া ফুল শিবিরেরই সমস্যা বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।