রাজস্থান-সহ একাধিক ভিন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের আটকে রাখা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিবকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতে বলেছিলেন। তারপরেই রাজস্থানে আটকে থাকা শতাধিক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক মুক্তি পেলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপেই মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের মুক্তি দেয় পুলিশ। বুধবার সকালে রাজস্থান থেকেই এই খবর জানিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কথা বললে বাংলাদেশি? শ্রমিকরা ‘আটক’ রাজস্থানে, তোপ মমতার
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। অভিযোগ ওঠে, রাজস্থানের এক এলাকায় কাজ করতে যাওয়া বাংলাভাষী বহু পরিযায়ী শ্রমিককে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে সন্দেহ করা হয় তাঁরা ‘বাংলাদেশি’। অথচ শ্রমিকদের কাছে আধার, ভোটার কার্ড-সহ সমস্ত নাগরিকত্বের কাগজপত্র ছিল। তবুও তাঁদের আটক করা হয়। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অসম থেকে গিয়েছিলেন এমন বাংলাভাষী শ্রমিকও ছিলেন ওই দলে। আটক শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০।
এই ঘটনার খবর পৌঁছায় রাজ্য বিধানসভায়। মঙ্গলবার ছিল চলতি অধিবেশনের শেষ দিন। অধিবেশনের মাঝপথে ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে গোটা ঘটনা জানান। শুনেই ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘসূত্রিতা না করে সঙ্গে -ঙ্গে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। নির্দেশ দেন, রাজস্থানের মুখ্যসচিব সুধাংশু পন্থের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করতে এবং শ্রমিকদের দ্রুত মুক্ত করতে। সেই অনুযায়ী যোগাযোগ হয় দুই রাজ্যের প্রশাসনের মধ্যে।
এরপর রাজস্থানে আটক শ্রমিক আইনুল হক বুধবার সকালে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার সকালেই কাজে যোগ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন। তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গ থেকে গিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন শ্রমিক, পাশাপাশি অসম থেকেও গিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন বাংলাভাষী। সকলেই আটক হয়েছিলেন। এখন সবাই মুক্ত। তবে আপাতত তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে ফেরা সম্ভব নয়, কারণ তাঁরা রাজস্থানেই কাজ করছেন।
এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন। বলেন, বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আটকে রাখা হচ্ছে। বাংলায় কথা বলা কি অপরাধ? তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার বিষয়েও জানান। এর পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গেও নানা রাজ্য থেকে মানুষ কাজ করতে আসেন। কিন্তু বাংলায় তাঁদের অপমান করা হয় না।