আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক খুনের ঘটনায় এবার গুরুতর অভিযোগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবার দাবি করলেন, আরজি করের সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করা হয়েছিল। এবং শুধু তাই নয়, মৃত চিকিৎসকের রক্তের নমুনাও নাকি পালটে দেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, আজ সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি হওয়ার কথা। তার আগেই শুভেন্দু অধিকারী এই সব চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন। যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এদিকে শুভেন্দু গতরাতে এও দাবি করেন যে সেই রাতে চিকিৎসকককে একটা ঘরে অত্যাচার করে, এরপর অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে দেহ রেখে দিয়ে আসা হয়। (আরও পড়ুন: ফের আক্রান্ত জুনিয়র ডাক্তাররা, সাগর দত্তের পুনরাবৃত্তি ন্যাশনাল মেডিক্যালে)
এদিকে ঘটনায় পুলিশি ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে শুভেন্দু গতকাল বলেন, খুনে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার এবং এক পুলিশ আধিকারিক একই সঙ্গে, একই জেলে আছে। এ কোথাও দেখা যায় না। তাঁর কথায়, 'কী অদ্ভুত, এই ঘটনায় গ্রেফতার সিভিক ভলান্টিয়র। তার সঙ্গে একই জেলে বন্দি টালা থানার ওসি আর সন্দীপ ঘোষ। ভাবতে পারেন আপনি আক্রান্ত হলে কোথায় যাবেন? থানায় তো? অথচ দেখুন থানার ওসিও জেলে। আরজি করের প্রাক্তন মালিকও জেলে। এ ভূ-ভারতে কোথাও নেই।' এরপর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির তুলনা টেনে নিয়ে এসে শুভেন্দু বলেন, 'উত্তর প্রদেশে একটা ঘটনা সামনে এলে যোগীজী কী করেন দেখতে পাচ্ছেন। অসমে ঘটেছিল এমন ঘটনা। পুকুরে চুবিয়ে-চুবিয়ে জল খাইয়েছে পুলিশ। মহারাষ্ট্রে আমাদের সরকার। বদলাপুরে রাম নাম সত্য করে দেওয়া হয়েছে ধর্ষকের। আর একটা অদ্ভুত রাজ্যে আমরা বাস করি যেখানে সরকারি হাসপাতালে ৩৬ ঘণ্টা ডিউটির পর ডাক্তার বোনকে রক্ষকের হাতে ধর্ষক হতে হয়।'
এদিকে শুভেন্দু যে নমুনা বদলের কথা বলেছেন, তা এখনও প্রমাণিত নয়। বা নিজের দাবির পক্ষে শুভেন্দু নিজেও কোনও প্রমাণ দেননি। তবে বিভিন্ন রিপোর্টেই দাবি করা হচ্ছে, আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতা চিকিৎসকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্ট সিবিআই। এই নিয়ে প্রথম থেকেই রহস্য এবং সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহের জাল কেটে নাকি এখনও সত্যের পথে এগোতে পারেনি সিবিআই তদন্তকারীরা। নির্যাতিতার মৃতদেহের আঘাতগুলি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে সিবিআই মনে করছে। এই আবহে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাসকে বেশ কয়েক দফায় ইতিমধ্যেই জেরা করেছে সিবিআই। এদিকে গত বুধবার আরজি করের মর্গের এক কর্মীকেও। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই কর্মী ক্লার্ক স্তরের। ময়নাতদন্তের পরের পর্যবেক্ষণ লেখায় ওই কর্মীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাঁকে অপূর্বের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। তাতে নাকি পরস্পরবিরোধী তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি থেকে স্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছে না। দিল্লি এবং কল্যাণী এইমসের বিশেষজ্ঞদের সেই ভিডিয়ো দেখানো হয়েছে। তবে তা থেকে কিছু বেরিয়ে আসেনি। এদিকে সেদিন তরুণী চিকিৎসকের দেহ সূর্যাস্তের পর হয়েছিল। সেখানে পোস্টমর্টেম রুমের আলো কম ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে। এদিকে আরও দাবি করা হচ্ছে, খুব দ্রুতই (১ ঘণ্টা ১০ মিনিট) এই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে জেরা করে এক ময়নাতদন্তকারী অফিসারের থেকে নাকি সিবিআই জেনেছে, পোস্টমর্টেমে তাড়াহুড়ো করা নিয়ে তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন, তবে সেই আপত্তি গ্রাহ্য করা হয়নি। সেই চিকিৎসক নাকি নিজের ফোনে আবার তরুণী নির্যাতিতার দেহের ক্ষতস্থানের ১৫টি ছবি তুলে রেখেছিলেন। তা সিবিআইয়ের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন।