অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে সমবায় সমিতি। তবে একাধিক সমবায় সমিতি রয়েছে যেগুলি দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। সেরকম ৪৩টি সমবায় সমিতিকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। শুধু তাই নয়, জানা গিয়েছে, এর মধ্যে সাতটি সমিতির কোনও খোঁজই মিলছে না। নাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলির কোনও কার্যালয়, সদস্য বা আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন: বিরোধীরা মাঠে নেই, বালি সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির সব আসনে জয়ী তৃণমূল
নদিয়া জেলা সমবায় দফতরে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাধারণত সমবায়গুলিকে পুনরায় সচল করার জন্য নির্বাচন করা হয়। যেগুলি সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলিতে পরিচালনা কমিটি গঠনের কাজও শুরু হয়েছে। তবে যেগুলি বহুদিন ধরে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে, তাদের বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কিছু সমবায় স্বাধীনতার সময় গঠিত হয়েছিল এবং বর্তমানে তাতে কোনও সদস্যই নেই। সমবায় দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকা ৫৬টি সমবায় সমিতিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরবর্তী যাচাইয়ের পর দেখা যায়, এর মধ্যে ১৩টি সমিতিকে আবারও সচল করা সম্ভব বলে মনে হয়েছে। তাই এগুলি সচল করার জন্য সদস্য সংগ্রহ, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শুরু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে নদিয়ায় মোট ৩৬৩টি সমবায় সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০৭টি এখনও সক্রিয়ভাবে আর্থিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত। বাকি সমিতিগুলির বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কার্যকরী কমিটি না থাকা, সদস্য সংখ্যা কমে যাওয়া এবং লেনদেন বন্ধ হওয়ার কারণে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে এগুলি বন্ধ হয়ে যায় বলে জানাচ্ছেন আধিকারিকদের একাংশ।
অভিযোগ উঠেছে, কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সমবায় সমিতিগুলিকে নিজেদের লাভের উৎসে পরিণত করেছেন। আমানতকারীদের টাকার হদিশ মিলছে না। অভিযোগ রয়েছে, কেউ-কেউ টাকা জমা দেওয়ার পর তা ফেরত পাননি। আবার অনেকে রাজনৈতিক চাপে টাকা দাবি করতেও সাহস পাননি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে প্রবল ক্ষোভ ও অনাস্থা।
সমবায় ব্যবস্থাকে দুর্নীতি-মুক্ত ও কার্যকর করে তুলতেই প্রশাসন এখন নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালন কমিটি গঠনে জোর দিচ্ছে। অনেক সমবায়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গিয়ে এবং সেখানে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু যেসব সমিতি পুরোপুরি অচল এবং প্রশাসনের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।