আবারও মর্মান্তিক মৃত্যু খড়্গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসে। সোমবার গভীর রাতে প্রাণ গেল ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের। ওই ছাত্রের নাম চন্দ্রদীপ পাওয়ার, বয়স ১৯ বছর। জানা যাচ্ছে, ওষুধ খাওয়ার সময় সেটি শ্বাসনালীতে আটকে যায়। যার ফলে মুহূর্তের মধ্যেই চোকিং ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু হয় মধ্যপ্রদেশের ওই পড়ুয়ার।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যার ঘটনা থামছেই না, পড়ুয়াদের মনোবল বাড়াতে পদক্ষেপ আইআইটি খড়গপুরের
আইআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দ্রদীপ সোমবার দুপুরে বি সি রায় হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন সর্দি-কাশির জন্য। তখন বড় কোনও অসুস্থতার কথা সামনে আসেনি। সন্ধ্যায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন তিনি। রাত ৯টা পর্যন্ত সবই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু রাত ১১টার ঠিক আগে তাঁর এক বন্ধু পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, চন্দ্রদীপ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওষুধ খাওয়ার সময়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আইআইটি কর্তৃপক্ষের তরফে আসে সেই ভয়ঙ্কর খবর, ছেলে আর নেই। চন্দ্রদীপ ছিলেন জওহরলাল নেহরু হলের ডি-৪০৮ নম্বর ঘরের আবাসিক। সোমবার রাত ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ বন্ধুরা তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তাররা চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি। তিন জন সিনিয়র চিকিৎসক ও অন ডিউটি ডাক্তার মিলে সিপিআর, জীবনদায়ী ওষুধ এবং টিউব ব্যবহার করে আটকে থাকা ওষুধটি বের করার চেষ্টা চালান। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। রাত ১১টা ৫ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, এটি ছিল সম্পূর্ণ চোকিংয়ের ঘটনা। কোনও কিছু শ্বাসনালীতে আটকে গেলে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক সময় এমন ভাবে সঙ্কুচিত হয়ে যায় যে ফুসফুসে একেবারেই অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে এমন অবস্থায় মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় চন্দ্রদীপের পরিবার পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বাবা জয়রাম পাওয়ার, অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। তিনি নিজে ক্যান্সারে আক্রান্ত। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি বাকরুদ্ধ। মঙ্গলবার সকালে খড়্গপুরে এসে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের পর ছেলের দেহ নিয়ে ফিরেছেন মধ্যপ্রদেশের বাড়িতে।
ঘটনার তদন্তে নেমেছে হিজলি ফাঁড়ির পুলিশ। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে শ্বাসনালীতে ওষুধ আটকে যাওয়ার বিষয়টিই সামনে এসেছে। চন্দ্রদীপের ঘর আপাতত সিল করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহজনক কিছু এখনও মেলেনি, তবে তদন্ত জারি থাকবে।