পাত্রীর বিয়ে হচ্ছে, তাই বলে প্রশাসনের নজর এড়াবে? তা আর হচ্ছে না। পাত্রীর বয়স ১৮ পেরিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিল হুগলি জেলা প্রশাসন। এখন থেকে জেলার যে কোনও মেয়ের বিয়েবাড়িতে বাধ্যতামূলকভাবে টাঙাতে হবে একটি পোস্টার। তাতে স্পষ্ট লেখা থাকবে, ‘এটি বাল্যবিবাহ নয়।’ মূলত যেক্ষেত্রে রূপশ্রী প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা নেওয়া হবে, সেখানেই পোস্টার টাঙাতে হবে।
আরও পড়ুন: পাত্র-পাত্রীর বয়স কত? ক্যাটারার-ডেকরেটরদের দেখতে হবে আধার, বাল্য বিবাহ নিয়ে
শুধু পোস্টারেই থেমে থাকছে না নির্দেশিকা। বিয়ের আগে পাত্রীপক্ষকে দিতে হবে মুচলেকা। তাতে লিখিতভাবে জানাতে হবে, বিয়ের সময়ে মেয়ের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হয়েছে। এই মুচলেকা ছাড়া মিলবে না রূপশ্রীর ২৫ হাজার টাকার সরকারি অনুদান। শুক্রবার, জেলা প্রশাসনের তরফে সমস্ত বিডিও এবং মহকুমা শাসকদের পাঠানো হয়েছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশ। প্রশাসনের ব্যাখ্যা, বাল্যবিবাহ রুখতে যতটা কড়া নজরদারি দরকার, তার থেকেও বেশি জরুরি সামাজিক সচেতনতা। আর বিয়েবাড়ির মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে পোস্টার টাঙানোর ফলে অন্যান্যদের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি হবে বলেই প্রশাসনের আশা।
হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অমিতেন্দু পাল জানান, রূপশ্রী প্রকল্পে সরকারি অনুদান তখনই দেওয়া হয়, যখন মেয়ের বয়স ১৮ পেরিয়েছে। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানে এই বার্তা দিয়ে পোস্টার লাগাতে বলা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনের কাজ সহজ হবে, তেমনই সমাজে বার্তাও যাবে বাল্যবিবাহ আইনত দণ্ডনীয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সম্প্রতি আরামবাগ মহকুমা-সহ জেলার নানা প্রান্তে একাধিক নাবালিকা বিয়ের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু সব জায়গায় যে বাল্যবিবাহ রোখা যাচ্ছে, তা নয়। অনেক সময়েই প্রশাসনের নজর এড়াতে গোপনে বিয়ে দেওয়া হয়। তাই এবার কেবল নজরদারি নয়, বরং বিয়ের দিনে অনুষ্ঠানের মধ্যেই সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়াই নতুন কৌশল।
স্কুলস্তরেও সচেতনতা চলছে। কন্যাশ্রী ক্লাবগুলির মাধ্যমে যেমন ছাত্রীরা এই বিষয়ে অবগত হচ্ছে, তেমনই পুলিশ ও প্রশাসন যৌথভাবে স্কুল ও গ্রামে শিবির করে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এখন সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের ক্ষেত্রেও বাড়তি দায়িত্ব দিচ্ছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে বিয়ের আগে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হয়। সঙ্গে জমা দিতে হয় বিয়ের আমন্ত্রণপত্র। আবেদন খতিয়ে দেখে, বয়স যাচাই করে তবেই মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। এবার সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলো আরও একটি ধাপ। এক আধিকারিক বলেন, বিয়ে মানেই এক বড় সামাজিক জমায়েত। সেখানেই যদি বার্তা দেওয়া যায়, এই বিয়ে বাল্যবিবাহ নয়, তা হলে সমাজে আরও সচেতনতা ছড়াবে। অনেকেই সতর্ক হবেন।