দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে রোগীদের কাছ থেকে প্যাকেজ মূল্যের বাইরে অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ উঠছিল। অনেক ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার সময় রোগী বা তাঁর পরিবারকে একটি নির্দিষ্ট প্যাকেজের খরচ জানানো হলেও, ছুটি পাওয়ার সময় বিলের অঙ্ক বেড়ে দাঁড়াত কয়েকগুণ বেশি। এই অতিরিক্ত বিকের বড় অংশই বিমা সংস্থাগুলি পরিশোধ করতে রাজি হতো না, ফলে ভুক্তভোগীদের সরাসরি পকেট থেকে অর্থ গুনতে হতো। সেই অভিযোগের লাগাম টানতে আগেই এই সংক্রান্ত বিল পাশ হয়েছে বিধানসভায়। এবার সেই বিলে চূড়ান্ত সিলমোহর দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
আরও পড়ুন: বেসরকারি হাসপাতালের বিল নিয়ে বাড়ছে অভিযোগ, আইন সংশোধন করতে চলেছে রাজ্য
রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যপাল ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্টস অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০২৫’ এ সম্মতি দিয়েছেন। চলতি বছরের ১৭ জুন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই বিল পেশ করে। এর মূল উদ্দেশ্য, রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও ক্লিনিকগুলিকে একটি নির্দিষ্ট প্যাকেজের বাইরে বাড়তি টাকা নেওয়া থেকে বিরত রাখা। বিল অনুযায়ী, রোগীর চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে এবং প্যাকেজের বাইরে কোনও অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ের প্রয়োজন হলে হাসপাতালকে তা রোগীর পরিবারকে আগে থেকেই স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। শুধু তাই নয়, প্যাকেজের রেট চার্ট হাসপাতালের ভেতরে এমনভাবে প্রদর্শন করতে হবে, যাতে যে কোনও ব্যক্তি সহজেই তা দেখতে পারেন। প্রদর্শিত তথ্য একাধিক ভাষায় থাকা বাধ্যতামূলক। প্রতিদিনের চিকিৎসা সংক্রান্ত ডেটাও হাসপাতালগুলিকে নিয়মিতভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে।
রাজ্য সরকারের মতে, এই আইন কার্যকর হলে রোগী পরিবার অনেকটাই স্বস্তি পাবে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনার জন্য এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।বিলটি বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল রাজভবনে। সূত্রের খবর, রাজ্যপাল বিলটির গুরুত্ব ও জনস্বার্থের দিকটি বিবেচনা করেই দ্রুত সম্মতি দিয়েছেন। রাজ্যপালের এই পদক্ষেপে সরকারও আশাবাদী। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যপালের অনুমোদনের পর আশা করা হচ্ছে এই ধরনের অনিয়ম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সাধারণ মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন। তবে বিধানসভা সচিবালয় সূত্রের দাবি, বর্তমানে আরও প্রায় ২০টি বিল রয়েছে, যা ইতিমধ্যেই বিধানসভায় পাশ হলেও রাজভবনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।