বর্ধমান জেলার গড় জঙ্গল এলাকায় অবস্থিত শ্যামরূপা মায়ের মন্দির এক সুপ্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী। এই মন্দিরকে বাংলার প্রথম দুর্গাপুজোর স্থান বলে মনে করা হয়। কথিত আছে, গৌড়ের রাজা লক্ষণ সেন বখতিয়ার খিলজির আক্রমণে আত্মগোপন করার সময় এই গড় জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ রায় জানিয়েছেন, সেই সময় এখানে একজন কাপালিক নরবলি দিয়ে মায়ের সাধনা করতেন। লক্ষণ সেনের উপস্থিতিতে কাপালিক নরবলি দিয়ে শক্তি মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে কবি জয়দেব নরবলি প্রথা বন্ধ করার শর্তে মায়ের দর্শন করান জয়দেবের অলৌকিক শক্তিতে কৃষ্ণের মুখের আদলে মা আবির্ভূত হয়েছিলেন। তখন থেকেই মায়ের নাম হয় শ্যামরূপা।
অষ্টমীর অলৌকিক ঘটনা এবং বর্তমান পুজো রীতি
গড় জঙ্গলের শ্যামরূপা মন্দিরে দুর্গাপুজো অত্যন্ত ধূমধামের সঙ্গে পালন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে মন্দির প্রাঙ্গণে অলৌকিকভাবে তোপধ্বনি শোনা যায়। এই তোপধ্বনির পরই শুরু হয় সন্ধিপুজোর বলিদান। সন্ধিক্ষণের কয়েক মিনিট আগে গোটা এলাকা সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ হয়ে যায় এবং কোথা থেকে এই তপধ্বনি আসে, তা আজও রহস্যে মোড়া। এই অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে অষ্টমী ও নবমীতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্তের সমাগম হয়। যদিও নরবলি প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তবে এখনও বলি প্রথার চল রয়েছে।
মন্দিরের জাগ্রত শক্তি ও ভক্তদের বিশ্বাস
শ্যামরূপা মায়ের মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত বলে পরিচিত। মন্দির চত্বরে একটি গাছে ঢিল বেঁধে মায়ের কাছে মানত করার প্রচলন রয়েছে। মনস্কামনা পূরণ হলে ভক্তরা এসে সেই ঢিল খুলে দেন এবং পুজো দেন। তেমনই একজন হলেন আস্তিক মণ্ডল। তিনি জানিয়েছেন, অনেক বছর আগে মানত করে গিয়েছিলেন। সেই মানত পূরণ হওয়ায় পরিবারের সঙ্গে পুজো দিতে এসেছেন বলে জানান তিনি। একইসুরে গোপীনাথপুরের বিনোদ ধীবর জানিয়েছেন, তাঁর মতো অনেকেই তাঁদের মনস্কামনা পূরণের পর নিয়মিত মন্দিরে আসেন এবং মায়ের প্রতি তাঁদের গভীর বিশ্বাস ও ভক্তি প্রকাশ করেন।
শ্যামরূপা মন্দিরে কীভাবে পৌঁছাবেন?
মন্দিরে পৌঁছানোর একাধিক উপায় আছে। দুর্গাপুর, পানাগড় বা বর্ধমান থেকে আসা যায়। মলানদিঘি হয়ে শ্যামরূপা মায়ের মন্দিরে আসতে পারবেন। দুর্গাপুজোর মতোই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ধূমধাম করে পালন করা হয়। এই ঐতিহাসিক মন্দির বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আজও বহু ভক্তের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু।