প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল পুজো পালিত হয়। এই বছর তেরো এপ্রিল অর্থাৎ ২৯ শে চৈত্র পড়েছে নীল পুজোর তারিখ। বাংলার ঘরে ঘরে প্রায় প্রতি বাড়ির মহিলারাই সন্তানের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত পালন করে থাকে, মন্দিরে এই দিন ভক্তদের ভিড় জমে।
নীল ষষ্ঠীর দিন সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যেবেলা শিবের মাথায় জল ঢেলে ফুল বেলপাতা ফল ছোঁয়ানো হয়, তারপর জ্বালানো হয় নীলের ঘরে বাতি। এরপর আকন্দ বা অপরাজিতা বা ধুতরা ফুল দিয়ে ভোলেনাথের পুজো করা হয়। সন্তানের মঙ্গল কামনায় মায়েরা করে থাকেন এই পুজো।
ভোলেনাথের পছন্দের ফুল ধুতরা আকন্দ অপরাজিতা কল্কে এবং তার সঙ্গে অবশ্যই বেলপাতা দিয়ে পুজো করা হয়। ভোলেনাথ শুধু বেলপাতাতেই তুষ্ট হয়ে থাকেন। নীল পুজোর জন্য গঙ্গামাটি বেলপাতা গঙ্গাজল দুধ দই কি মধু কলা বেল ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।
ভোলেনাথের অপর নাম নীলকন্ঠ। নীল পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক লোক কথা। শোনা যায় পুরা কালে এক বামন ও বামনী ছিল, যারা ভক্তিভরে অনেক ব্রত পালন করলেও তাদের সন্তান বেশি দিন জীবিত থাকত না। একদিন কাশির গঙ্গার ঘাটে বসে দুজনে এই দুঃখে কাঁদছিল, তাদের এই রূপ দশা দেখে মা ষষ্ঠী বুড়ি বামনীর রূপ ধরে এসে জিজ্ঞেস করে যে তোরা কাঁদছিস কেন।
বামনী তখন মা ষষ্ঠীকে নিজের দুঃখের কথা জানালে, মা ষষ্ঠী বলেন তোরা নীল ষষ্ঠীর ব্রত কর। বামুনী তখন উত্তর দেয়, সে কি মা! আমরা এই ব্রত সম্পর্কে তো জানিনা। তখন মা ষষ্ঠী বলেন, চৈত্র মাসে সংক্রান্তির আগের দিন উপবাস করে সন্ধ্যেবেলায় নীলের ঘরে বাতি জ্বেলে ভোলেনাথের যে পুজো করবে তার ওই দিন অশেষ পুণ্য লাভ হয়। ওই দিনকেই বলা হয় নীল পুজো। ভোলেনাথ কে ওই দিন দুধ দই ঘি মধু, গঙ্গা জল দিয়ে অভিষেক করে ফল আকন্দ ধুতরা বেলপাতা অপরাজিতা নিবেদন করে ফল উৎসর্গ করে নীলের ঘরে বাতি জ্বেলে এই পুজো সম্পন্ন করতে হয়। তারপর পুজোর পরে জল খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করে ফলমূল সাবু খেতে হবে। যারা নীল ষষ্ঠীর উপবাস করে তাদের ছেলেমেয়েরা সুস্থ থাকে ভালো থাকে এবং অল্প বয়সে তাদের অকাল মৃত্যু হয় না। এ কথা বলার পরে মা ষষ্ঠী অদৃশ্য হন। এরপর থেকে বামনী শুরু করে নীল ষষ্ঠীর পুজো। তারপর থেকে আর তাদের ছেলেমেয়ে সঙ্গে কোন অঘটন ঘটেনি, তারা সুস্থভাবে বেঁচে থাকে। এভাবেই প্রথম শুরু হয় নীলষষ্ঠীর পুজো।