'সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু'র তদন্তে নেমে হাড়হিম করে দেওয়া খুনের ছক ফাঁস করল পুলিশ! ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশের সেই মিরাট! যেখানকার বাসিন্দা মুসকান ও তার প্রেমিক সাহিল শুক্লা বর্তমানে হাজতবাস করছে মুসকানের স্বামী সৌরভ রাজপুতকে খুনের অভিযোগে।
সেই মিরাটেরই একটি গ্রাম হল আকবরপুর সাদত। এই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ২৫ বছরের অমিত কাশ্যপ ওরফে মিক্কি। গত রবিবার (১৩ এপ্রিল, ২০২৫) সকালের ঘটনা। শোওয়ার ঘরের বিছানায় পড়ে ছিল অমিতের নিথর দেহ। তাঁর মৃতদেহের নীচেই 'শুয়ে ছিল' একটি বিষধর সাপ! এবং অমিতের শরীরেও সাপের কামড়ের একাধিক ক্ষত পাওয়া গিয়েছিল।
এসব দেখে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত হয়ে যান, সাপের কামড়েই প্রাণ গিয়েছে অমিতের। কিন্তু, তদন্ত এগোতেই পুলিশ জানতে পারে, মোটেও সাপের কামড়ে প্রাণ যায়নি তাঁর। পুলিশের দাবি, আদতে অমিতকে খুন করা হয়েছে! আর সেই অপকর্ম অমিতের স্ত্রী ও স্ত্রীর প্রেমিক 'যৌথ প্রচেষ্টায়' সম্পন্ন করেছে! তারপর নিজেদের কুকীর্তি ঢাকতে অমিতের বিছানায় বিষধর সাপ ছেড়ে রেখেছিল তারা!
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিতের শরীরের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাদের হাতে পৌঁছতেই পুরোটা পরিষ্কার হয়ে যায়। কারণ, ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, অমিতের শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়নি। এই তথ্য পাওয়ামাত্র পুলিশ আরও গভীরে তদন্ত শুরু করে। যার জেরে সামনে আসে অমিতের স্ত্রী রবিতার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। শেষমেশ এই ঘটনায় খুনের অভিযোগে রবিতা ও তার প্রেমিক অমরদীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাকেশ কুমার মিশ্র জানিয়েছেন, মেহমুদপুর সিখেদা নামক নিকটবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দা এক সাপুড়ের কাছ থেকে ওই বিষধর সাপটি কিনেছিল অমরদীপ। দাম দিতে হয়েছিল ১,০০০ টাকা!
শনি-রবিবারের রাতে প্রথমে অমরদীপ ও রবিতা অপেক্ষায় ছিল কতক্ষণে অমিত ঘুমোন। তিনি ঘুমিয়ে পড়তেই প্রেমী যুগল একসঙ্গে শ্বাসরোধ করে অমিতকে খুন করে। এরপর তারাই অমিতের মৃতদেহের নীচে জ্যান্ত সাপটিকে ছেড়ে দিয়ে, তার উপরেই অমিতের লাশ চাপা দিয়ে দেয়! ফলত, সাপটি অমিতের মৃত্যুর পর তাঁর শরীরে একের পর এক কামড় বসায়। পরবর্তীতে ওই সাপটিকে জীবন্ত অবস্থাতেই উদ্ধার করে বন দফতর এবং সেটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরও জানা গিয়েছে, অমিতের পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত ছিলেন যে তাঁর মৃত্যু সাপের কামড়ে হয়েছে। কিন্তু, গ্রামবাসী পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং অমিতের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। তাতেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সামনে আসে।
পুলিশ জানতে পেরেছে,গত প্রায় একবছর ধরে অমরদীপের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছে রবিতা। এই অমরদীপ আবার অমিতেরই সহকর্মী। দু'জনই শ্রমিক। সেই সূত্রেই অমরদীপ মাঝেমধ্যেই অমিতের বাড়িতে আসত।
প্রতিবেশীদের আগেই সন্দেহ ছিল - অমরদীপ ও রবিতার মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অমিতের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁদের সন্দেহ হয় এবং তাঁরা পুলিশকে বিষয়টি জানান।
পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি অমিতও তাঁর স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক জেনে ফেলেন। এবং এর প্রতিবাদ করেন। আর, সেই কারণেই তাঁকে খুনের ছক কষে অমরদীপ ও রবিতা। খুন করেও যাতে ধরা না পড়তে হয়, তার জন্য দু'জনই মোবাইলে গুগল ও ইউটিউব খুলে এ নিয়ে রীতিমতো 'রিসার্চ' করে। তাদের এই কাণ্ডে পুলিশ পর্যন্ত হতবাক হয়ে গিয়েছে!