পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে ভারতের সব শহরকে পিছনে ফেলে প্রথমে উঠে এসেছে ইন্দোর। তবে এটাই প্রথম খেতাব জয় নয়। এই নিয়ে একটানা আটবার দেশের পরিচ্ছন্ন শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর।
বৃহস্পতিবার ভারতের বার্ষিক স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণ ২০২৪-২৫-এর ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নয়া দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার প্রদান করেন। ইন্দোরের এই অষ্টম জয় স্বচ্ছ ভারত অভিযানের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।ভারতের শহরগুলিকে আরও পরিস্কার আর পরিচ্ছন্ন করে তোলার লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগ।২০২৪-২৫ সংস্করণের মূল থিম ছিল 'রিডিউস, রিউস, রিসাইকেল'—যা কেবল পরিচ্ছন্নতা নয়, বরং পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পুনঃব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শহরগুলিকেও উদ্ভাবনী সমাধান খোঁজার জন্য উৎসাহিত করেছে।
আরও পড়ুন-বৃষ্টি-ধসে মৃত্যু মহিলা তীর্থযাত্রীর! অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত অমরনাথ যাত্রা
ইন্দোর শহরটি তার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দরজায় দরজায় আবর্জনা সংগ্রহ, পৃথকীকরণ এবং কম্পোস্টিংয়ের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতার মানদণ্ড স্থাপন করেছে। রাজওয়াড়া প্যালেস, লালবাগ প্যালেস, সরাফা বাজারের মতো পর্যটন স্থানগুলি আবর্জনা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে মুক্ত, যা ইন্দোরকে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণে ইন্দোরের ধারাবাহিক সাফল্যের পিছনে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পৌরসংস্থার কার্যকর ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।সুরাট, যে শহর গত বছর ইন্দোরের সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল, এবার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। হীরা ও টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই শহরটি পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।নবি মুম্বই ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে, পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশংসিত হয়েছে।
আরও পড়ুন-বৃষ্টি-ধসে মৃত্যু মহিলা তীর্থযাত্রীর! অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত অমরনাথ যাত্রা
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক ২০১৬ সালে স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণ শুরু করে, যা বিশ্বের বৃহত্তম নগর পরিচ্ছন্নতা সমীক্ষা হিসেবে বিবেচিত। এই বছরের সমীক্ষায় নতুন কাঠামো প্রবর্তন করা হয়েছে। শহরগুলিকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। অতি ক্ষুদ্র (২০,০০০-এর কম), ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় এবং মিলিয়ন প্লাস (১০ লক্ষের বেশি)।এই নতুন কাঠামোর মাধ্যমে ছোট শহরগুলিকেও তাদের পরিচ্ছন্নতার প্রচেষ্টার জন্য স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ‘সুপার স্বচ্ছ লিগ’ নামে একটি বিশেষ বিভাগ চালু করা হয়েছে, যেখানে ইন্দোর, সুরাটের মতো শীর্ষস্থানীয় শহরগুলি অতিরিক্ত মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করবে।২০২৪-২৫ সালের স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণে ৪৬টি সূচকের ভিত্তিতে ৪,৪৭৭টি শহর, ৬১টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং ৮৮টি গঙ্গা শহরের মূল্যায়ন করা হয়েছে। মূল্যায়নের মানদণ্ডের মধ্যে ছিল দরজায় দরজায় বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রতিবন্ধী-বান্ধব শৌচাগার এবং নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া। সমীক্ষায় প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে, যা এই উদ্যোগকে একটি জন-আন্দোলনে রূপ দিয়েছে।