বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা বেজে ৩৮ মিনিট, আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে টেক অফ করে এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিমান। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ে বিমানটি। দুর্ঘটনার মূহুর্তের যেসব ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে বিমান ভেঙে পড়ার পর প্রবল আগুনের শিখা এবং নিকষ কালো ধোঁয়া দেখা যায়। আর সেই আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে বিমানে থাকা যাত্রী এবং ক্রু সদস্যদের। সূত্রের খবর, অধিকাংশের দেহ এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে তাঁদের চেনা যাচ্ছে না। তাই নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণের কাজ চলছে। অন্যদিকে, প্রিয়জনদের দেহ পেতে হাসপাতালে হাহাকার পড়ে গিয়েছে। (আরও পড়ুন: কী হয়েছিল বোয়িংয়ের বিমানে? এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন)
আরও পড়ুন: লড়াইয়ে দুই 'বন্ধু', ইরানে ইজরায়েলের হামলার পর কী বার্তা ভারতের?
বর্তমানে আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালের মর্গের পিছনে অবস্থিত বিজে মেডিক্যাল কলেজের এক্সামিনেশন হলটি অস্থায়ীভাবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। অন্যদিকে, কড়া পাহারায় মর্গে রাখা হয়েছে মৃতদেহগুলিকে।জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত মণিপুর, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য থেকে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের রক্তের নমুনা দেওয়ার জন্য আসেন।হাসপাতাল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমপক্ষে ২০০ জন তাদের নমুনা দিয়েছেন। মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের কুলদীপ সিং পি বারোট বলেন, 'আমরা আশা করছি বিদেশী নাগরিকদের পরিবারের সদস্যরা আগামীকাল আসবেন।' দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের খবর পেতে গুজরাটের নানা জেলা থেকে আত্মীয়-পরিজনেরা ছুটে আসছেন আমদাবাদ সিভিল হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় উদ্যোগপতি তৃপ্তি সোনি, যাঁর ভাই স্বপনিল সোনি, তাঁর স্ত্রী যোগা ও ভ্রাতৃবধূ আলপা সোনি ছিলেন ওই বিমানে। তৃপ্তি জানিয়েছেন, 'আমি হাসপাতালে অপেক্ষা করছি। এখনও ওদের কোনও খোঁজ নেই।' ওই পরিবারটি লন্ডনে তাঁদের বড় দাদার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকেই ছুটি কাটাতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সেই যাত্রাপথই রূপ নিল বিভীষিকায়। (আরও পড়ুন: 'ওরা নিজেরা সামলাতে পারবে…', এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা নিয়ে ভারতকে বার্তা ট্রাম্পের)
আরও পড়ুন: 'ভারত-পাক যুদ্ধ থামালাম, তা নিয়ে কেউ লিখল না', বাহবা না পেয়ে 'হতাশ' ট্রাম্প
রক্তের নমুনা দিতে মুম্বই থেকে এসেছিলেন ইমতিয়াজ আলি (৪২)। আহমেদাবাদ থেকে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া ১৭১ বিমানে তার ভাই জাভেদ, জাভেদের স্ত্রী মরিয়ম এবং তাদের দুই সন্তান-আমানি এবং জায়েন ছিল। জাভেদ লন্ডনের একটি হোটেলে ম্যানেজার ছিল।ইমতিয়াজ বলেন, 'জাভেদ গত ৬ জুন মায়ের চিকিৎসার জন্য এবং ইদ উপলক্ষে দেশে এসেছিল। পুরো পরিবার বিমানে ছিল। আমি মাকে এ এখনও বিষয়ে কিছু বলিনি। আমরা মৃতদেহও দেখিনি। এখানকার ডাক্তাররা আমার রক্তের নমুনা দিতে বলেছেন।' তবে তিনি আশাবাদী, তাঁর ভাই জীবিত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভোর হতে না হতেই সত্যি হল শঙ্কা, ইরানের তেহরানে হামলা ইজরায়েলের
অন্যদিকে, পুণের বাসিন্দা সমির শেখ বুঝতে পারছিলেন না কেন তাকে ৭২ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। তাঁর ছোট ছেলে ইরফান সমির শেখ ওই বিমানের একজন ক্রু সদস্য ছিলেন। সমির বলেন, 'এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ মর্গের ভেতরে গিয়ে আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে আমার ছেলের দেহ পুড়ে যায়নি। আমরা ৩ দিন অপেক্ষা করতে পারছি না। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদের মৃতদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।' দুই বছর আগে এয়ার ইন্ডিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন ইরফান। বিমানে ওঠার আগে মায়ের সঙ্গে শেষবার কথা বলেছিলেন ইরফান।
দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে উদ্ধারকার্য চলছে, এবং তদন্তে সহায়তা করতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ব্ল্যাক বক্স খোঁজার কাজ। এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, ২৪২ জন যাত্রী ও কর্মী নিয়ে বিমানটি আমদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে উড়েছিল। উড্ডয়নের এক মিনিটের মধ্যে সেটি ভেঙে পড়ে মেঘানিনগর এলাকার একটি মেডিক্যাল হস্টেলের উপর।