দিল্লি-এনসিআর থেকে পথ কুকুরদের সরানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলার রায়দান স্থগিত রাখল শীর্ষ আদালত। গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবনের রায় নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এই আবহে রায় খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই। নতুন বেঞ্চও তৈরি করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার বিচারপতি বিক্রম নাথ, সন্দীপ মেহতা ও এনভি আঞ্জারিয়ার আদালতে মামলার শুনানি হয়। (আরও পড়ুন: 'পহেলগাঁওয়ের ঘটনা উপেক্ষা করা যায় না', জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর মামলায় বড় পর্যবেক্ষণ SC-র)
শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের তরফে সওয়াল করে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বছরে ৩৭ লক্ষ কুকুরের কামড়ের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, 'পথ কুকুরদের মেরে ফেলার কথা কেউ বলছে না। আমরা কেউই পশুবিদ্বেষী নই। তবে তাদের আলাদা করে রাখতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'বাচ্চারা মারা যাচ্ছে, শুধুমাত্র স্টেরিলাইজ করায় কোনও কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষকে কুকুরে কামড়ায়। তাঁর দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে এই সংখ্যাটা আরও বেশি। তিনি বলেন, ‘যাঁরা চিকেন, মাটন খাচ্ছেন, তাঁরা পশুপ্রেমী হয়ে গেছেন।’ অন্যদিকে, পশুপ্রেমী সংগঠনের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তাঁর বক্তব্য, লোকালয় থেকে পথ কুকুরদের ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে সরানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এমন কোনও আশ্রয়কেন্দ্রই নেই দিল্লিতে। এমন অবস্থায় পথ কুকুরদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সিব্বল। সিব্বল আদালতে এও জানান, গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে ইতিমধ্যে সাতশো পথ কুকুরকে ধরা হয়ে গিয়েছে। ওই পথ কুকুরদের নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন আইনজীবী। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে কুকুরগুলিকে জীবাণুমুক্ত করার পরে যদি তাদের ফিরে আসতে না দেওয়া হয় তবে তারা কোথায় যাবে? কুকুর টেরিটোরিয়াল হয়, এক জায়গায় আটকে রাখলে সমস্যা বাড়বে, যার প্রভাব মানুষের উপরেও পড়বে।
এই আবহে লক্ষ লক্ষ বেওয়ারিশ কুকুরের সুস্থতা এবং প্রাণী সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী আদেশ স্থগিত করার দাবি জানান আইনজীবী কপিল সিব্বল।এদিকে, দিল্লির স্থানীয় প্রশাসন (পুরপ্রশাসন)-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেয় তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘আইনসভা আইন তৈরি করে। তা কার্যকর করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। কিন্তু তাদের যে কাজ করার কথা, তা করা হচ্ছে না। তাদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।’ এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উপর আংশিক স্থগিতাদেশের আর্জি জানান তিনি। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে রায়দান স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
ঘটনার সূত্রপাত
সম্প্রতি দিল্লি-এনসিআরের রাস্তা থেকে পথ কুকুরদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে স্বতোঃপ্রণোদিত মামলায় কড়া নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং আর মহাদেবনের ডিভিশন বেঞ্চ। পরে সেই রায়ের প্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় পশুপ্রেমীদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক শিবির থেকে বি টাউন ‘পথ কুকুর নিকেশের’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। রাজধানীতে পথ কুকুরদের পাশে দাঁড়াতে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান অনেকে। এরমধ্যেই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয় সুপ্রিম কোর্টে।বুধবারই পথ কুকুর সরিয়ে ফেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আদালতে জমা পড়া একটি আবদেনে সাড়া দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি গাভাই। এরপরেই মামলা ২ বিচারপতির বেঞ্চ থেকে স্থানান্তরিত হয় ৩ বিচারপতির বেঞ্চে।