তিন মাসে দ্বিতীয়বার- ওড়িশার কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির (কেআইআইটি) হস্টেল থেকে এক নেপালি ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধারে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।ব ছর কুড়ির ওই তরুণী ভুবনেশ্বরের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে বি.টেক নিয়ে পড়ছিলেন। আর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি পড়ুয়ার মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
আরও পড়ুন-১৫ দিন রান্না করতে পারেননি! 'সুপ্রিম' নির্দেশ, মেয়েকে কাছে রাখার অধিকার হারালেন বাবা
ভুবনেশ্বর পুলিশ কমিশনার এস দেবদত্ত সিং জানিয়েছেন, 'এক নেপালি ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়েছে কেআইআইটির মহিলা হস্টেলের একটি ঘর থেকে। সম্ভবত তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ওই ছাত্রী কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের বি.টেক পড়ছিলেন।' একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানান, মৃতদেহটি হস্টেলের ১১১ নম্বর ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, 'আমরা একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছি এবং বিষয়টি তদন্ত শুরু করছি। হস্টেলের ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা মৃতদেহটি উদ্ধার করেছি এবং ময়নাতদন্তের জন্য এইমসে পাঠিয়েছি।' কমিশনার জানিয়েছেন, নয়া দিল্লিতে নেপাল দূতাবাসকে ঘটনাটি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তারা অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
অন্যদিকে, শুক্রবার নেপালি ছাত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এক বিবৃতিতে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, 'ভুবনেশ্বরের কেআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেপালি ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এই কঠিন সময়ে আমরা শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।'
বিদেশ মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, 'ওড়িশা সরকার মৃত ছাত্রীর পরিবারকে পূর্ণ সহায়তা করেছে এবং বর্তমানে ওড়িশা পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে। ভারত সরকারের কাছে সমস্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে আমরা নেপাল কর্তৃপক্ষ এবং ওড়িশা সরকারের পাশাপাশি কেআইআইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
এদিকে নয়াদিল্লির নেপাল দূতাবাস এক্স পোস্টে লিখেছে, 'ওড়িশার কেআইআইটিতে নেপালি ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। তার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য ভারতের বিদেশ মন্ত্রক, ওড়িশা সরকার, পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। পাশাপাশি নেপালের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, শুক্রবার একটি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীর মৃত্যুর তদন্তের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছে নেপাল। একদিন আগে হোস্টেলের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া গিয়েছিল। নেপালের বিদেশমন্ত্রী আরজু রানা দেউবাও জানান, ঘটনার পরপরই নেপাল সরকার ভারত সরকার, ওড়িশা সরকার এবং দিল্লির নেপালি দূতাবাসের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা তদন্তের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছে।
আরও পড়ুন-১৫ দিন রান্না করতে পারেননি! 'সুপ্রিম' নির্দেশ, মেয়েকে কাছে রাখার অধিকার হারালেন বাবা
গোপন সামরিক তথ্য ফাঁসের শাস্তি! মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে সরালেন ট্রাম্প, দায়িত্বে রুবিও
এই ঘটনা কেআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেপালি ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকেই উদ্ধার হয়েছিল তৃতীয় বর্ষের এক নেপালি ছাত্রীর মৃতদেহ। ওই ঘটনার পরে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল নেপালি পড়ুয়াদের। পরে ওই ঘটনার তদন্তে উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দফতরে যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই অভিযোগ পাওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছিল।
সেই ঘটনার রেশ কাটকে না কাটতে নেপালি ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন।অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) ওড়িশা শাখাও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক দীপ্তিময়ী প্রতিহারী বলেন, 'বারবার আত্মহত্যার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তরুণীকে ন্যায় দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা প্রয়োজন।'