রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশকারী না শরণার্থী, সেটাই সবচেয়ে আগে বিবেচনা করা দরকার। রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বেশ কিছু মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এবার তিন দিনের বিশদ শুনানির পথে হাঁটল শীর্ষ আদালত।
বিচারপতি সূর্য কান্তের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, তারা এই মামলায় বিস্তারিত শুনানি করবে। কারণ, একবার প্রশ্নটির ‘অথরেটেটিভ’ ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে, এরপরের আইনি ও নীতিগত সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক নিয়মেই আসবে। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি খুবই সরল। ওরা শরণার্থী না অনুপ্রবেশকারী?' পাশাপাশি বেঞ্চের প্রশ্ন, 'রোহিঙ্গারা কি শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকারী? যদি তাই হয়, তাহলে তারা কি সুরক্ষা, সুযোগ-সুবিধা বা অধিকার পাওয়ার অধিকারী?'সেই সঙ্গেই শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, দ্বিতীয় বিষয় হল, রোহিঙ্গারা যদি শরণার্থী না হয় এবং অনুপ্রবেশকারী হয়, তাহলে তাদের বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির পদক্ষেপ কি ন্যায্য ছিল?
আরও পড়ুন-হাড়হিম কাণ্ড! লন্ডনে শিখ যুবককে কুপিয়ে খুন, ধৃত তিন মহিলা-সহ ৫
রোহিঙ্গাদের পক্ষে পিটিশনকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও কলিন গনসালভেস। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী মানুষেরা যদি শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পান, তাহলে ভারতের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের কিছু নির্দিষ্ট সুরক্ষা তাঁদের প্রাপ্য।অন্যদিকে, যদি তাঁদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হয়, তাহলে তাঁদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত কতটা ন্যায্য, সেই প্রশ্নও আদালতের পর্যালোচনার আওতায় আসবে।মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, বহু রোহিঙ্গা ও অনুপ্রবেশকারীকে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষিত করার পর, বছরের পর বছর বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষত অসমে, অন্যায্যভাবে আটক রাখা হয়েছে। এ বিষয়েও শুনানি হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।শুধু আইনি নয়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলির বাসযোগ্যতা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ও শুনানির আওতায় আনা হবে। কারণ, মানবাধিকার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও এই বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন-হাড়হিম কাণ্ড! লন্ডনে শিখ যুবককে কুপিয়ে খুন, ধৃত তিন মহিলা-সহ ৫
চলতি বছরের মে মাসে একটি শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, যদি রোহিঙ্গারা ‘বিদেশি’ হিসেবে ধরা পড়েন, তবে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাঁদের নিয়ে কেন্দ্র সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে।কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ভারত রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী সনদে স্বাক্ষরকারী নয়। ফলে ইউএনএইচসিআর-এর শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক ধরা যায় না।তিনি উল্লেখ করেন, ফরেনার্স অ্যাক্ট-এর ধারা ৩ অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশিদের প্রবেশ ও প্রস্থানের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, বিশেষ করে যদি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠে। তাঁর মতে, ভারতীয় সংবিধানের ৫১(সি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান দেখাতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা ভারতীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তবেই তা গ্রহণযোগ্য। পিটিশনকারীদের মতে, রোহিঙ্গারা ইউএনএইচসিআর কর্তৃক স্বীকৃত শরণার্থী এবং তাঁদের মায়ানমারে ফেরত পাঠালে নন-রিফাউলমেন্ট নীতির লঙ্ঘন হবে। কারণ মায়ানমার সরকার নিজেই রোহিঙ্গাদের 'স্টেটলেস' ঘোষণা করেছে এবং সেখানে তাঁদের উপর নির্যাতন ও হত্যার আশঙ্কা রয়েছে।