অ্যান্টার্কটিকায় বাড়ি। কিন্তু সমুদ্রে ঘুরতে বেরিয়ে এভাবে যে পথ হারাবে, তা বোধ হয় ভাবেনি 'পিঙ্গু'। ৩,০০০ কিলোমিটার সাঁতরে এসে নিউ জিল্যান্ডে এসে উঠল সে। আর তারপরেই ভ্যাবাচাকা খেয়ে, ক্লান্ত শরীরে দাঁড়িয়ে রইল ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
পিঙ্গু আসলে অ্যাডেলি পেঙ্গুইন। তবে বিখ্যাত কার্টুন পেঙ্গুইনের নামে তার নাম পিঙ্গু(Pingu) রেখেছেন স্থানীয়রা।
হ্যারি সিং, নামের এক স্থানীয় প্রথম পিঙ্গুকে সমুদ্রের ধারে দেখেন। তিনি বলেন, 'প্রথমে তো দেখে সফট টয় ভেবেছিলাম। তারপর দেখি নড়াচড়া করছে। সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুললাম।'
এখনও পর্যন্ত এটাই নিউ জিল্যান্ডের উপকূলে দেখা পাওয়া তৃতীয় অ্যাডেলি পেঙ্গুইন।

হ্যারি সিং এবং তাঁর স্ত্রী ক্রাইস্টচার্চ শহরের দক্ষিণে অবস্থিত বার্ডলিংস ফ্ল্যাটে সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। তখনই তাঁরা প্রথম পিঙ্গুর দেখা পান। ব্যাপারটা কত বিরল তা বুঝতে দেরি হয়নি হ্যারির। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল বের করে ভিডিয়ো করে নেন। পোস্ট করেন ফেসবুকে।
'এক ঘণ্টার জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল পেঙ্গুইনটা। মনে হয় এতটা সাঁতরে এসে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তার উপর নতুন স্থানে একেবারে একা। ঘাবড়ে গিয়েছিল,' বলেন তিনি।
তবে শুধু ফেসবুকে পোস্ট করেই থামেননি হ্যারি। দায়িত্ব সহকারে স্থানীয় পশু উদ্ধারকারী দলদের খবর দেন। 'পেঙ্গুইনটা জলেই নামছিল না। ফলে অন্য পশুপাখিতে আক্রমণ করতে পারত। এমন দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত্ বেড়াল বা কুকুরের পেটে যাবে। তাছাড়া খুব রোগা আর ক্লান্ত মনে হচ্ছিল দেখে,' বলেন হ্যারি।
মানুষ দেখেও কী প্রতিক্রিয়া দেবে বুঝতে পারছিল না পিঙ্গু। পুরো বিষয়টাই তো নতুন তার কাছে!
অবশেষে তিনি টমাস স্ট্র্যাকের কাছে যান। টমাস স্ট্র্যাক প্রায় ১০ বছর ধরে নিউ জিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডে পেঙ্গুইনদের পুনর্বাসনের কাজ করছেন।
কিন্তু অ্যাডেলি পেঙ্গুইন দেখে চমকে যান তিনিও। অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের বাইরে এদের কথা কখনও শোনেননি তিনি। সেদিন সন্ধ্যাতেই একজন পশুচিকিত্সক ও টিম নিয়ে আসেন টমাস। উদ্ধার করেন পিঙ্গুকে।
চলছে সুশ্রষা
পিঙ্গুর ওজন কিছুটা কম ছিল। তাছাড়া তার শরীরে জলও কম। তাই তাকে বেশি বেশি করে তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে। একটি ফিডিং টিউবের মাধ্যমে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়েছে। দিব্যি সোনা ছেলের মতো খাওয়াদাওয়া করছে পিঙ্গু।
পেঙ্গুইনটি সুস্থ হলে ব্যাঙ্কস উপদ্বীপের একটি নিরাপদ সমুদ্র সৈকতে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেখানে কুকুরের ভয় নেই।
১৯৬২ সাল এবং ১৯৯৩ সালের পর এই প্রথম একটি অ্যাডেলি পেঙ্গুইন এল নিউ জিল্যান্ডে।