বিজেপির সিস্টেমই ছাত্রীকে মৃত্যু দিকে ঠেলে দিয়েছে। ওড়িশায় অধ্যাপকের যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে পড়ুয়ার আত্মহত্যার ঘটনায় সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। গত শনিবার অধ্যাপকের যৌন হেনস্তার বিচার চেয়ে ফকির মোহন অটোনোমাস কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে দেয়।সোমবার রাতে মৃত্যু হয় ওই ছাত্রীর। আর এই ঘটনায় বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার।
ওড়িশার বালাসোরের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। এই আবহে এক্স বার্তায় ওড়িশার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক বলেছেন, ছাত্রীর মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর কথায়, 'একটি ব্যর্থ সিস্টেম কীভাবে কারও জীবন কেড়ে নিতে পারে তা ভাবতে আরও বেশি বিরক্তিকর লাগে। সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হল এটি কোনও দুর্ঘটনা ছিল না বরং এমন একটি সিস্টেমের ফল যা সাহায্য করার পরিবর্তে নীরব ছিল। ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করতে করতে ওই ছাত্রী শেষ পর্যন্ত তার চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।' তিনি আরও বলেন, 'ওই ছাত্রী কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু তাঁকে উপেক্ষা করা হয়। ন্যায়বিচারের জন্য তিনি উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এমনকি একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছিলেন। তিনি বালাসোরের সাংসদের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কথা জানিয়েছিলেন। যদি একজনও দায়িত্ব নিতেন এবং ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করতেন, তাহলে সম্ভবত মেয়েটির জীবন বাঁচানো যেত।'
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'তিনি কেবল শারীরিক আঘাতের কারণেই প্রাণ হারাননি, বরং রাজ্য সরকারের অবহেলার কারণে মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পুরো ধারাবাহিকতা বলছে যে এটি প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসঘাতকতা-একটি পরিকল্পিত অবিচার ছাড়া আর কিছুই নয়।' অন্যদিকে বিজেপিকে নিশানা করে রাহুল গান্ধী বলেন, 'ওই ছাত্রী সাহসিকতার যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। কিন্তু তাঁকে ন্যায়বিচার দেওয়ার পরিবর্তে, বারবার হুমকি, ভয় দেখানো এবং অপমান করা হয়েছিল। প্রতিবারের মতো, বিজেপির সিস্টেম অপরাধীদের আশ্রয় দিয়েছে এবং একটি নিষ্পাপ মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।এটা আত্মহত্যা নয়, এটি সিস্টেম দ্বারা পরিকল্পিত হত্যা।' এরপরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে রাহুল বলেন, 'দেশের মেয়েরা ভেঙে পড়ছে, মরছে আর তোমরা চুপ করে আছো। দেশ জবাব চায়। ভারতের মেয়েরা নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার চায়।'
এদিকে, রাহুল গান্ধীর মন্তব্যকে নোংরা রাজনীতি বলে দাবি করেছে বিজেপি।কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, 'ওড়িশার কন্যার ট্র্যাজেডি নিয়ে রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের রাজনীতি দুর্ভাগ্যজনক। একটি সংবেদনশীল বিষয়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো রাহুল গান্ধীর সস্তা মানসিকতার পরিচয় দেয়।' তিনি আরও বলেন, ওড়িশার ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু কংগ্রেস এই ঘটনাকে রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে। তাঁর কথায়, 'প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপি সর্বদা মহিলাদের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস সর্বদা রাজনৈতিক সুযোগের সন্ধান করেছে।এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীর শোকাহত পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।'
অন্যদিকে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি শোকপ্রকাশ করে মৃতের পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন, এই ঘটনায় দোষী সকলকে আইন অনুসারে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'ফকির মোহন কলেজের ছাত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে দুঃখিত। সরকারের সমস্ত দায়িত্ব পালন এবং বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিমের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ছাত্রীটির জীবন বাঁচানো যায়নি। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি ৷ ভগবান জগন্নাথের কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি তাঁর পরিবারকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দেন ।' তিনি আরও লেখেন, 'আমি মৃত ছাত্রীর পরিবারকে আশ্বস্ত করছি, এই ঘটনায় দোষী সকলকে আইন অনুসারে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। এর জন্য, আমি ব্যক্তিগতভাবে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি ৷ সরকার পরিবারের পাশে রয়েছে ৷'