সদ্য আলাপ হওয়া যে পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে তিনি পহেলগাঁও ঘোরাচ্ছিলেন, তাঁদের দিকেই বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে গিয়েছিল নরপিশাচরা। কাশ্মীরের অতিথিদের প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণের তোয়াক্কা করেননি কাশ্মীরি তরুণ সইদ আদিল হুসেন শাহ। সামনেই যে জঙ্গিকে পেয়েছিলেন, ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তার উপর। সর্বশক্তি দিয়ে তার হাত থেকে মারণাস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন! পারেননি। জঙ্গিরা তাঁর ধর্ম জানতে চায়নি। বদলে সরাসরি তাঁর শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল, ২০২৫) পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে একমাত্র একটি ব্যতিক্রমী নাম চোখে পড়বে। ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্য়মে সেই তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে। যা প্রকাশ করা হয়েছিল ২২ এপ্রিল, রাত ৮টায়। সেই তালিকায় নিহতের সারণীর ১০ নম্বরে নাম রয়েছে সইদ আদিল হুসেন শাহের! সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা তথ্য বলছে, মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি পর্যটক নন, নাম পড়েই বোঝা যায় - তিনি হিন্দুও নন, তিনি স্থানীয় বাসিন্দা, একজন আম-কাশ্মীরি।
সইদের পরিবারে রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান। পরিবারে রোজগেরে বলতে আর কেউ নেই। পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারছেন না, যে তরুণ রোজের মতো হাসিমুখে কাজে বেরিয়েছিলেন, তিনি আসলে আর ফিরবেন না! কীভাবে কী হয়ে গেলে, এখনও যেন বোধগম্য হচ্ছে না তাঁদের! কীভাবে চলবে সংসার, জানা নেই তাও।
সইদ আদিলের বাবা সইদ হায়দর শাহ বুধবার (২৩ এপ্রিল, ২০২৫) সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিনিধিকে বলেন, 'আমার ছেলে গতকালও কাজে বেরিয়েছিল। পহেলগাঁওয়ে গিয়েছিল ও। তখন দুপুর ৩টে হবে। আমরা শুনলাম, হামলা হয়েছে। তারপর থেকে আমরা বারবার ওর মোবাইলে ফোন করছিলাম। কিন্তু, ওর ফোন বন্ধ ছিল। পরে বিকেল ৪টে নাগাদ ফোনটা চালু হয়। কিন্তু, তখনও কেউ ফোন তোলেনি। আমরা থানায় গেলাম। আর তখনই জানতে পারলাম, আমার ছেলেকেও গুলি করে খুন করা হয়েছে। এর জন্য যে বা যারা দায়ী, আমরা তাদের কঠোর শাস্তি চাই।'
হায়দর আরও জানান, ‘আমার ছেলেই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিল।... আমরা এই খুনের সুবিচার চাই। ওর তো কোনও দোষ ছিল না। কেন ওকে খুন করা হল?’
অন্যদিকে, ছেলেকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন সইদের মা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। প্রশ্ন করলে ঠিক মতো কথাই বলতে পারছেন না। তার মধ্যেই কোনওক্রমে তিনি বলেন, 'ও ছিল আমাদের সকলের একমাত্র অবলম্বন। ও পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়াত। তা থেকে যা রোজগার হত, তাতেই আমাদের সংসার চলত। আমাদের পরিবারে রোজগার করার মতো আর কেউ নেই। আমরা জানি না, ওকে ছাড়া আমরা কীভাবে বাঁচব!'
সইদ আদিলের কাকা শাহিদ বাগ সিং বলেন, 'আদিল এই পরিবারের সবথেকে বড় ছেলে ছিল। ওর বাচ্চারা আছে, স্ত্রী আছে। ওই ছিল এই পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। ওদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল। ওরা খুব গরিব। এই ঘটনা ওদের একেবারে শেষ করে দিল। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করব, যাতে কিছু সাহায্য করা হয়। এবার আদিলের পরিবারের আগের তুলনায় আরও বেশি সাহায্য ও নিরাপত্তা প্রয়োজন।'