পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের জঙ্গিরা হত্যা করেছে। আর তার জেরে কাশ্মীরিদের জীবনে বদল এসেছে। এই বদলটা অবশ্য ভাল নয়। খারাপ বার্তা বহন করে নিয়ে আসছে। তাই তো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠছে সেই সব পোস্ট। যা নতুন করে কপালে ভাঁজ ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। হিমাচল প্রদেশের আর্নী বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশ্মীরি পড়ুয়ারাকে মারধর করা হয়েছে। তাঁকে ‘জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। আবার প্রয়াগরাজে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন কয়েকজন কাশ্মীরি পড়ুয়া ও চাকরিজীবী। তাঁদের দ্রুত ঘর খালি করতে বলছেন বাড়িওয়ালা। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হিংসা নেমে আসছে কাশ্মীরিদের উপর। এটাই কয়েকদিনের মধ্যে বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাতে মারাও যেতে পারেন কেউ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিরা হিন্দু চিহ্নিত করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ। আর তার পর থেকে কাশ্মীরিদের উপর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। কাশ্মীরিরা বোঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন যে, তাঁরা অপরাধ করেননি। অপরাধীও নন। অপরাধ করেছে জঙ্গিরা। এই জঙ্গিদের কোনও জাত–ধর্ম হয় না। এই সব কথা এখন অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দারা খুব সহজে বিশ্বাস করতে রাজি নন। এই নিয়ে জম্মু–কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় আহ্বায়ক নাসির খুয়েহামি বলেন, ‘একটা ভিডিয়ো সামনে এসেছে। তাতে ‘হিন্দু রক্ষা দল’ বলেছে, কাশ্মীরি পড়ুয়াদের দেরাদুন ছেড়ে চলে যেতে হবে। দেরাদুনের কাশ্মীরি পড়ুয়ারা এখন আতঙ্কিত। আর আতঙ্কিত হয়ে দেরাদুনের বিএফআইটি কলেজের একাধিক কাশ্মীরি পড়ুয়া বিমানবন্দরে গিয়ে বসে আছেন।’
আরও পড়ুন: ‘সাপের মাথা মোদী থেঁতলে দিয়েছেন’, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড নিয়ে বড় দাবি দিলীপ ঘোষের
এই পরিস্থিতি যখন একাধিক রাজ্যে তৈরি হচ্ছে তখন অঘটনের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যে কোনও সময়ে কাশ্মীরিদের জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়ঙ্কর দিন। কিন্তু কাশ্মীরে ফিরে গিয়ে কোন লাভ হবে? এই প্রশ্নও উঠছে। কারণ পহেলগাঁওতে পর্যটকদের ঘিরে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার জেরে কাশ্মীর এখন পর্যটকশূন্য হতে চলেছে। বাতিল হয়ে গিয়েছে বিপুল পরিমাণ সফর। ট্যুরিস্ট অপারেটররা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। কারণ আগাম বুকিং করা ৯৫ শতাংশ পর্যটক কাশ্মীর সফর বাতিল করেছেন বলে খবর। কাউকেই বোঝানো যায়নি এই অপরাধ কাশ্মীরিদের নয়।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বরফে ঢাকা এবং গাছপালায় ঘেরা ভূস্বর্গ ত্যাগ করে পর্যটকরা দার্জিলিং, সিকিম, ডুয়ার্স যেতে শুরু করেছেন। দুধের স্বাদ যেন ঘোলে মেটাতে চাইছেন। তবু কাশ্মীর যেতে নারাজ। একদিকে রুজি–রোজগারে কোপ পড়ছে। অপরদিকে আক্রমণও নেমে আসছে। চণ্ডীগড়ের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল চত্বরে আক্রান্ত হন কাশ্মীরি ছাত্ররা। কয়েকজন ছাত্র মাঝরাতে হস্টেলে ঢুকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেছে কাশ্মীরি ছাত্রদের উপর বলে অভিযোগ। পরিস্থিতির আঁচ করেই নয়াদিল্লিতে জম্মু–কাশ্মীরের রেসিডেন্ট কমিশনার হেল্পলাইন নম্বর প্রকাশ করেছেন। চিন্তিত জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার বক্তব্য, ‘ভিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বলেছি, তাঁরা যেন কাশ্মীরিদের খেয়াল রাখেন।’