সুনেত্রা চৌধুরী
জায়গাটা শুধু অন্য হল। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরে গোয়েন্দা ব্যর্থতার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটার প্রেক্ষিতে এমনই মনে করছেন শীর্ষ আধিকারিকরা। বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কাশ্মীরে পর্যটকদের উপরে যে জঙ্গি হামলা চালানো হতে পারে, সে বিষয়ে আগেই গোয়েন্দাবার্তা মিলেছিল। এমনকী ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং অন্যান্য গোয়েন্দা এজেন্সির তরফে জম্মু ও কাশ্মীরের স্থানীয় নিরাপত্তা আধিকারিকদের সতর্কও করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে বলা হয়েছিল যে হামলা চালানো হতে পারে শ্রীনগরে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের আশপাশেই (১৯ এপ্রিল) সেই হামলার আশঙ্কা আছে বলে পুলিশ এবং ভারতীয় সেনাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল। এমনকী বাজে আবহাওয়ার কারণে মোদীর সফর বাতিল হয়ে গেলেও সুরক্ষা ব্যবস্থায় কোনওরকম ঢিলেঢালা করা হয়নি। নেওয়া হয়নি কোনওরকম ঝুঁকি।
সবথেকে কঠিন ব্যাপার গোপন বার্তা ‘ডিকোড’ করা
শেষপর্যন্ত হামলাও চালানো হয়। কিন্তু সেটা শ্রীনগর নয়, বরং শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পহেলগাঁওয়ে। বিষয়টি নিয়ে এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক বলেছেন, '১০ বারের মধ্যে ন'বারই এরকম তথ্য সঠিক বলে প্রমাণিত হয় না। কিন্তু এবার যে (গোয়েন্দা তথ্য) ছিল, তাতে পর্যটকদের উপরে হামলা চালানোর যে কথা বলা হয়েছিল, সেটা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। (যে কোনও বার্তার) সবথেকে কঠিন পার্ট হল (সেই বার্তাটা) ব্যাখ্যার অংশটা। আর তাতে জায়গাটা ভুল হয়ে গিয়েছে।'
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের পকেটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ভারতের, বড় পদক্ষেপের ঘোষণা মোদী সরকারের
শ্রীনগরে জোরদার করা হয়েছিল নিরাপত্তা
অর্থাৎ জায়গাটা বাদ দিয়ে সব গোয়েন্দাবার্তাই ঠিকমতো ‘ডিকোড’ করা হয়েছিল। আর সেটাই সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পর্যটকদের উপরে হামলার আশঙ্কায় শ্রীনগর এবং শ্রীনগর লাগোয়া এলাকায় নিরাপত্তার বহর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। হোটেল হোক বা শ্রীনগর থেকে ২২ কিমি দূরে দাচিগ্রাম জাতীয় উদ্যানের মতো বিখ্যাত টুরিস্ট স্পট হোক- নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল সর্বত্র।
আরও পড়ুন: বড় কিছু হবে এবার? ধাপে ধাপে যেন পোক্ত রাস্তা তৈরি ভারতের, চেপে ধরল পাকিস্তানকে
এমনকী নিরাপত্তায় যাতে কোনওরকম খামতি না থাকে, সেজন্য পুলিশের ডিজি নলিন প্রভাত শ্রীনগরে চারদিন ছিলেন বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, শ্রীনগরের উপরে কড়া নজর রেখেছিলেন ডিজি। আর ২২ এপ্রিল যখন পহেলগাঁওয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা, তখন সবেমাত্রই জম্মুতে পৌঁছান। হামলার খবর শুনেই তড়িঘড়ি উপত্যকায় ফিরে আসেন বলে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: চেন্নাই হয়ে শ্রীলঙ্কায় পহেলগাঁও হামলার জঙ্গি? ‘টিপ’ কলম্বো বিমানবন্দরে 'অ্যাকশন'
স্থানীয় স্তরের ‘ইনপুট’ পাওয়ার ক্ষেত্রে গলদ?
তবে পহেলগাঁওয়ে স্থানীয় স্তর থেকেও কোনও ‘খবর’ পাওয়ার ক্ষেত্রেও যে খামতি ছিল, তাও তুলে ধরেছেন আধিকারিকরা। বিষয়টি নিয়ে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় যে হামলা চালানো হতে পারে, সেটা না বোঝার অংশটা একটা বড় খামতি। আর যেহেতু এটা জানা ছিল না যে জঙ্গিরা ওই এলাকার আশপাশে থাকত এবং এখনও থাকে, তাই স্থানীয় স্তরের গোয়েন্দা ব্যর্থতায় বড়সড় গলদ ছিল বলে মনে করছেন আধিকারিকরা। যদিও যে সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তাঁরা জানিয়েছেন যে এরকম ‘ইনপুট’-র বিষয়ে জানতেন না।