হাজার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হল না। দিনের আলোয় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ১৫ বছরের কিশোরীর গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। প্রথমে ভুবনেশ্বর, পরে দিল্লি এইমসে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানল নাবালিকা। আর এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি।গত ১৯ জুলাই পুরীর বালঙ্গার বায়াবার গ্রামের কাছে বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার সময় তিন দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে ওই নাবালিকাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারপর নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। জ্বলন্ত অবস্থাতেই কোনওক্রমে দুষ্কৃতীদের কবল থেকে পালিয়ে রাস্তায় ছুটে বেরিয়ে আসে মেয়েটি। দুষ্কৃতীরা তখনই এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয়।অন্যদিকে, নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে স্থানীয় কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২০ জুলাই তাকে এয়ারলিফ্ট করে দিল্লির এইমস-এ নিয়ে যাওয়া হয় । হাসপাতাল সূত্রে খবর, কিশোরীর শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়। তবে গত কয়েকদিন ধরেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শেষে শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কিশোরীর।এই ঘটনায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি এক্স পোস্টে লেখেন, 'বালঙ্গার ঘটনায় নির্যাতিতার মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত । সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টা এবং দিল্লির এইমস-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তার জীবন বাঁচানো যায়নি । আমি নাবালিকার আত্মার চির শান্তি কামনা করি এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন তার পরিবারকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দেন।' প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ উঠে, তিন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী নাবালিকার রাস্তা আটকেছিল। কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি হওয়ার পরে ওই দুষ্কৃতীরাই তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তবে পরে সংবাদপত্র ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায়, অগ্নিদগ্ধ ওই কিশোরী নাকি বয়ান বদল করেছে। এক্স পোস্টে ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে, 'বালঙ্গার ঘটনায় কিশোরীর মৃত্যুর খবরে আমরা শোকাহত। পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করেছে। বর্তমানে দন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তদন্ত অনুসারে, এখনও পর্যন্ত এটি স্পষ্ট যে অন্য কোনও ব্যক্তি এই ঘটনায় জড়িত নয়। অতএব, আমরা সকলকে অনুরোধ করছি এই দুঃখজনক মুহূর্তে এই বিষয়ে কোনও সংবেদনশীল মন্তব্য না করার জন্য।'এদিকে, ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও এই ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। এক্স বার্তায় তিনি জানান,'পুরী জেলার বালঙ্গা এলাকায় অগ্নিদগ্ধ কিশোরীর এইমস-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুতে তিনি দুঃখিত ও মর্মাহত। ওই কিশোরীর প্রতি আমার সমবেদনা। ঈশ্বর তাঁর পরিবারের সদস্যদের এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দিন।' এই ঘটনা নিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, 'রাস্তায় দগ্ধ অবস্থায় দৌঁড়চ্ছিল কিশোরী। মুখে, গলায় বাঁধা কাপড়, হাত বাঁধা সাহায্য চেয়ে ছুটে এসেছিল তাঁর বাড়ির দিকে। মেয়েটি খুব কষ্টে বলছিল, ওকে তিনজন মিলে আগুন লাগিয়েছে।' উল্লেখ্য, এই ঘটনার আগেই ওড়িশার বালেশ্বরে এক কলেজ ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন কলেজেরই এক অধ্যাপক। কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিবাদে তিনি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়েছিল তাঁর। ঘটনার কয়েকদিন পরই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনার ঠিক পরপরই পুরীতে এই বর্বরতা।