মাওবাদী নেতা ছিলেন এককালে। তবে এখন সেই দুর্গা প্রসাই রাজতন্ত্র এবং হিন্দু রাষ্ট্রের দাবি তুলে সরব হয়েছেন নেপালে। চলমান আন্দোলনের অন্যতম 'মুখ' এই প্রাক্তন মাওবাদী কমান্ডার। এই সের মাঝেই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকার কড়া হাতে দমন করতে পারেন রাজতন্ত্রের দাবি তোলা রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে। রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক পার্টির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রবীন্দ্র মিশ্র এবং সাংসদ তথ দলের সাধারণ সম্পাদক সমশের রানার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হতে পারে। আপাতত তাঁরা জেল হেফাজতে আছেন। তাঁদের মধ্যে সমশের রানা ক্যানসার আক্রান্ত। তিনি ভারতে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। তবে রানা এবং রবীন্দ্রর পাসপোর্ট 'বাজেয়াপ্ত' করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। (আরও পড়ুন: উত্তরপূর্ব ভারত নিয়ে উস্কানি দিতে 'চিনকে ডাকলেন' ইউনুস, পালটা তোপ মুখ্যমন্ত্রীর)
আরও পড়ুন: 'পার্বত্য চট্টগ্রাম তো ভারতের অংশ হতে চায়', উঠল বাংলাদেশ ভাগের ডাক
নেপালে রাজতন্ত্র ও হিন্দুত্ব ফিরিয়ে আনার দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তাতে আরপিপি ছাড়া অংশ নিচ্ছে বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এই সব দল এবং সংগঠন মিলে গড়ে উঠেছে জয়েন্ট পিপলস মুভমেন্ট কমিটি। সেই কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রাক্তন মাও নেতা দুর্গা। পুলিশের অভিযোগ, গত ২৮ মার্চ কাঠমান্ডুতে অশান্তির সূচনা তিনিই করেছিলেন। সেদিনের সেই হিংসায় মারা গিয়েছিলেন ৩ জন। আরপিপির শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা সহ শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে ২৮ মার্চের 'জনআন্দোলনে' দুর্গাকে 'পিপলস কমান্ডার' হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তবে হিংসার পর থেকেই তিনি পলাতক। অভিযোগ, সেদিন দুর্গা নিজে একটি গাড়ি চালিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। তারপরই হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তেজিত জনতার মধ্যে। (আরও পড়ুন: উত্তরপূর্ব ভারত নিয়ে চিনকে 'অর্থনৈতিক উপদেশ' দেওয়া ইউনুস 'ভিক্ষা বাটি' হাতে তৈরি)
আরও পড়ুন: 'ভারত তাদের শুল্ক অনেকটাই কমাতে চলেছে', জল্পনার মাঝে বড় দাবি ট্রাম্পের
এদিকে ওলির নেতৃত্বাধীন শাসক জোটের অনেক সাংসদ প্রাক্ত রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলেছেন। অভিযোগ উঠেছে, কাঠমান্ডুর হিংসায় রাজার ভূমিকাও থাকতে পারে। এদিকে নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের নিরাপত্তা কমিয়ে দিয়েছে সেই দেশের সরকার। আগে প্রাক্তন রাজার জন্যে ২৫ জন নিরাপত্তারক্ষী বরাদ্দ থাকত। এখন তা কমিয়ে ১৬ করা হয়েছে। এদিকে সংসদের সবচেয়ে বড় দল নেপালি কংগ্রেসের দাবি, কাঠমান্ডুর হিংসার জন্যে জ্ঞানেন্দ্রকে দায়ী করা উচিত। এদিকে পুষ্প কমল দহাল ওরফে প্রচণ্ডও এই হিংসার জন্যে প্রাক্তন রাজাকেই দায়ী করেছেন।
উল্লেখ্য, সংসদীয় ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ২০০৮ সালে নেপালে ২৪০ বছরের রাজতন্ত্রে ইতি টানা হয়েছিল। যদিও মাঝেমধ্যেই রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি তোলেন অনেকেই। এই আবহে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নেপালের গণতান্ত্রিক দিবসে প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের ভিডিয়ো বার্তার পরে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে হিন্দু রাজতন্ত্রের দাবি। ২৮ মার্চ পূর্ব কাঠমান্ডুর তিনকুনে এলাকায় মিছিল করেন হাজার-হাজার মানুষ। হাতে রাজা জ্ঞানেন্দ্রর ছবি এবং নেপালের জাতীয় পতাকা নিয়ে ‘দেশকে বাঁচাতে রাজা ফিরে আসুন’, ‘দুর্নীতিবাজ সরকারের পতন হোক’, ‘আমরা রাজতন্ত্র ফেরত চাই’ স্লোগান তুলতে থাকেন তাঁরা। এদিকে নেপালে ফের যাতে রাজতন্ত্র ফিরে না আসে, তার জন্যে নেপালি কংগ্রেস এবং বামদলগুলি একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে।