প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসে লটারি ছেড়ে মেরিট-ভিত্তিক এইচ-১বি ভিসা প্রদানের নিয়ম চালু করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা পরে বাতিল করে দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড বাইডেন। চলতি দফায় হোয়াইট হাউস দখল করার পরে ফের সেই নিয়ম চালু করায় তৎপর হয়েছেন ট্রাম্প। যার ফলে মার্কিন গ্র্যাজুয়েট, প্রযুক্তি খাতের কর্মী ও বৈশ্বিক প্রতিভার ওপর নির্ভরশীল কোম্পানিগুলোর ওপর বড় প্রভাব পড়তে পারে।
জানা গিয়েছে, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিওরিটি (ডিএইচএস) এবং ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)-এর যৌথ উদ্যোগে ট্রাম্পের টেবলে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।এই প্রসঙ্গে ইউএসসিআইএস-এর ডিরেক্টর জোসেফ এডলো নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, 'প্রশাসন মার্কিন নাগরিকত্ব পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে চাইছে। এই পরীক্ষায় খুব একটা কঠিন কিছু নেই। উত্তরগুলো মুখস্থ করা খুব সহজ।'
ইউএস অফিস অফ ম্যানেজমেন্ট এবং বাজেট’স অফিস অফ ইনফর্মেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্তৃপক্ষ বর্তমান লটারি নিয়মে ভিসা প্রদান বাতিল করে স্কিল-এক্সপেরিয়েন্স এবং বেতনের মতো বেশকিছু মাপকাঠিতে আবেদনকারীকে মেপে তার আবেদন মঞ্জুর করার নিয়ম চালু করতে প্রস্তাব রেখেছেন।এতে বলা হয়েছে, স্কিল, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রস্তাবিত বেতনের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করা হবে। নতুন এই নিয়মটি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হতে পারে।প্রতি বছর ৮৫ হাজার জনকে এইচ-১বি ভিসা দেওয়া হলেও, আবেদন পড়ে কয়েক লাখ। ফলে লটারির মাধ্যমে বাছাই হয়। এতে অনেক যোগ্য প্রার্থী বাদ পড়ে যায়, আবার তুলনামূলক কম অভিজ্ঞরাও সুযোগ পেয়ে যান। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে মেধা ও যোগ্যতাই হবে নিয়োগের মূল মাপকাঠি।
সরকার এইচ-১বি ব্যবস্থার অপব্যবহার নিয়েও উদ্বিগ্ন। অনেক কোম্পানি মার্কিন কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তুলনামূলক কম বেতনে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে।অ্যাপল, আমাজন ও মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তারা তাদের এইচ-১বি কর্মীদের মধ্যে অনেককে স্তর ১ ও স্তর ২-এর মতো সর্বনিম্ন বেতনের স্তরে রাখে, যা স্থানীয় মিডিয়ান বেতনের চেয়ে অনেক কম। এতে করে তারা একজন মার্কিন কর্মীর চেয়ে ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ কম বেতন দিয়ে এইচ-১বি কর্মী নিয়োগ করে।ইনস্টিটিউট ফর প্রোগ্রেসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, লটারির পরিবর্তে যদি বেতনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তাহলে একজন এইচ-১বি ভিসাধারীর গড় বেতন ৯১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩১৪.৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪৮ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৯৭.৬০ টাকা হতে পারে।
অন্যদিকে, বাইডেন প্রশাসনের প্রাক্তন আধিকারিক ডগ র্যান্ড বলেছেন, উচ্চ বেতনভোগীদের পক্ষে এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা ভুল ছিল। তিনি বলেন, 'আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, এইচ-১বি প্রক্রিয়া হল মার্কিন কোম্পানিগুলির জন্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সেরা এবং মেধাবী আন্তর্জাতিক স্নাতকদের নিয়োগের প্রধান উপায়।' চলতি সপ্তাহেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স একাধিক কোম্পানির সমালোচনা করেন, যারা তাদের নিজস্ব কর্মীদের ছাঁটাই করে এবং তারপর বিদেশী কর্মী নিয়োগ করে।