অপারেশন সিঁদুরে ধ্বংস হওয়া মুরিদকের লস্কর ঘাঁটি নতুন করে গড়ে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছ। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার সদর দফতর ছিল এই মুরিদকেতে। সেই মারকাজ তৈয়বার ধ্বংসাবশেষ পুরো ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে একটি নতুন কাঠামো তৈরি করা হবে। এরই মাঝে রিপোর্টে দাবি করা হল, লস্কর নেতা সাইফুল্লাহ কাসুরি এক সভায় বলে যে এই জঙ্গি ঘাঁটি পুনর্নিমাণে পাক সরকার তাদের সাহায্য করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই কাঠামো তৈরি করা হবে। এর জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। পাকিস্তান সরকার মারকাজ তৈয়বার পুনর্নিমাণের জন্য ৪ কোটি পাকিস্তানি রুপি বরাদ্দ করেছে। যদিও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার অনুমান অনুযায়ী ১৫ কোটি পাক রুপি প্রয়োজন এই জঙ্গি কেন্দ্র ফের গড়ে তোলার জন্য।
এরই মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিয়ো। তাতে দেখা যাচ্ছে, সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন সম্পর্কে বড় বড় দাবি করছে লস্কর-ই-তৈয়বার উপ-প্রধান সাইফুল্লাহ কাসুরি। ভিডিয়োতে, কাসুরি অভিযোগ করেছে যে পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী মুরিদকেতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদর দফতর পুনর্নির্মাণের জন্য তহবিল সরবরাহ করেছে। এই স্থানটি ভারতের 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সময় ধ্বংস করেছিল। প্রায় দুই মিনিটের এই ভিডিয়োটিতে (যার সত্যতা হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি) কাসুরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়। নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে লস্কর-ই-তৈয়বা নেতা জোর দিয়ে বলে যে তাদের 'সংকল্প দৃঢ়'। এরই সঙ্গে এই জঙ্গি নেতা আরও দাবি করে যে শীঘ্রই জম্মু ও কাশ্মীরের নদী এবং বাঁধ 'তাদের' হবে। এই কাসুরি ২২ এপ্রিলের পহেলগাঁও হামলার মাস্টারমাইন্ড বলে দাবি করেন অনেকে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬-৭ মে-র মধ্যবর্তী রাতে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় মারকাজে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কমান্ডারদের বাসস্থানের জন্য ব্যবহৃত দুটি হলুদ বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি একটি লাল দোতলা ভবনও ধ্বংস করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে ধ্বংসস্তূপটি ভেঙে ফেলা হলেও ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারের প্রক্রিয়া এখনও চলছে। রাষ্ট্রসংঘের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার লক্ষ্য, ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই একই স্থানে একটি নতুন কাঠামো তৈরি করা। উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি হল পাকিস্তান সরকারের ঘোষিত তথাকথিত 'কাশ্মীর সংহতি দিবস'। গত বছর এই দিবস উপলক্ষেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির পাশাপাশি হামাস নেতাদের দেখা গিয়েছিল ভাষণ দিতে।
মারকাজ তৈয়বার পরিচালক মৌলানা আবু জার এবং লস্কর-ই-তৈয়বার কমান্ডার ইউনুস শাহ বুখারির তত্ত্বাবধানে এই ভেঙে পড়া কাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ চালানো হয়েছিল। এখানেই ফের সন্ত্রাসবাদী কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। হামলার পর, লস্কর-ই-তৈয়বার বেঁচে থাকা অবশিষ্ট জঙ্গিদের সাময়িকভাবে বাহাওয়ালপুরের মারকাজ আকসায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ের মধ্যে আবদুল রশিদ মহসিনের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয় কাসুর জেলার মারকাজ ইয়ারমুকে। এই আবদুল হল লস্কর-ই-তৈয়বার উপ-প্রধান সাইফুল্লাহ কাসুরির ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে উঠে এসেছে, যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি এখন বন্যা ত্রাণের আড়ালে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরির তহবিল সংগ্রহ করছে। লস্কর-ই-তৈয়বার খিদমত-ই-খালাক অনলাইন তহবিল সংগ্রহের প্রচার চালাচ্ছে। এই তহবিল মুরিদকে এবং অপারেশন সিঁদুরে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য শিবির পুনর্নির্মাণে ব্যয় করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এভাবে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের আড়ালে জঙ্গি ঘাঁটির জন্য অর্থ সংগ্রহের কৌশলটি নতুন নয়। ২০০৫ সালে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর লস্কর-ই-তৈয়বা, জামাত-উদ-দাওয়ার ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত কোটি কোটি টাকা অনুদান সংগ্রহ করেছিল। পরে তদন্তে জানা যায় যে, এই তহবিলের ৮০ শতাংশই সন্ত্রাসী পরিকাঠামোতে ব্যবহার করা হয়েছিল। কোটলিতে মারকাজ আব্বাস নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল সিংহভাগ টাকা। ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় সেই মারকাজও।