নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করেও কি শুধুমাত্র জরিমানা দিয়ে রেহাই পাওয়া যাবে? সংসদের নিম্নকক্ষে লোকসভায় জনবিশ্বাস বিল পাশ হওয়ার পরে সেই বিষয়টি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে মুখ খুলল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। একটি বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়েছে, ১৯৪০ সালের ওষুধ এবং প্রসাধনী আইনের ২৭ (ডি) ধারার আওতায় শাস্তির বিধান লঘু করা হয়নি বা ওই বিষয়টি অপরাধমূলক নয় বলেও চিহ্নিত করা হয়নি। শুধুমাত্র 'কম্পাউডিং'-র (যে আইনি নিয়মের আওতায় ফৌজদারি মামলার পরিবর্তে জরিমানা দেওয়া যায়) একটি বিকল্প পদ্ধতি প্রদান করা হয়েছে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, যদি কোনও ওষুধ নিম্নমানের না হয় বা তাতে কোনও বিষাক্ত উপকরণ না থাকে, কোনও বিভ্রান্তিকর লেবেল না থাকে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি না করা হয়, লাইসেন্স ছাড়া তৈরি না করা হয়, ওষুধের মান ও শক্তি কমিয়ে দিতে সক্ষম কোনও উপকরণ না থাকে, তবেই ফৌজদারি মামলার মুখে পড়ার পরিবর্তে জরিমানা দিয়ে রেহাই পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: Shoulder pain: ভারী ব্যাগ বইতে বইতে কাঁধে বড্ড ব্যথা? ৪ উপায়ে কমিয়ে ফেলুন যন্ত্রণা
সহজে ব্যবসার পথ প্রশস্ত করার জন্য জনবিশ্বাস বিল পেশ করা হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রের। যে বিলের মাধ্যমে দেশের ৪২টি আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। যে ক্ষেত্রে আইনি লড়াইয়ের প্রয়োজন নেই, সেরকম কয়েকটি নিয়ম বাদ দেওয়া হয়েছে সেই বিলে। সেভাবেই জনবিশ্বাস বিলের মাধ্যমে ১৯৪০ সালের ওষুধ এবং প্রসাধনী আইনের দুটি ধারার ক্ষেত্রে সংশোধনী পেশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘দোষীদের ফাঁসি দেওয়া উচিত’, ক্ষুব্ধ রাজ্যপালের হুঁশিয়ারিতে তোলপাড় রাজ্য–রাজনীতি
ওই আইনের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, যদি বারবার কোনও ওষুধের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে কোনও সরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা পরীক্ষার রিপোর্ট ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে যে শাস্তির বিধান আছে, সেটা কমিয়ে শুধু জরিমানা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগে একাধিকবার ওই অপরাধের জন্য দু'বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০,০০০ টাকার বেশি জরিমানার বিধান ছিল। এখন সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র জরিমানা চাপানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে জরিমানার অঙ্কটা অনেকটা বাড়বে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি জরিমানা চাপানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় সংশোধনীতে নিম্নমানের ওষুধের জন্য এক বা দু'বছরের কারাদণ্ড এবং ২০,০০০ টাকার বেশি জরিমানার যে বিধান ছিল, সেটা তুলে দিয়ে শুধুমাত্র জরিমানার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যেটার ফল ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
সেই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করার বিষয়টি জনবিশ্বাস বিলে অপরাধমূলক তালিকার বাইরে আনার প্রস্তাব করা হয়নি। কোনও ওষুধ নিম্নমানের না হলে, কোনও বিষাক্ত উপকরণ না থাকলে, কোনও বিভ্রান্তিকর লেবেল না থাকলে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি না করা হলে, লাইসেন্স ছাড়া তৈরি না করা হলে, ওষুধের মান ও শক্তি কমিয়ে দিতে সক্ষম কোনও উপকরণ না থাকলে ফৌজদারি মামলার মুখে পড়ার পরিবর্তে জরিমানা দিয়ে রেহাই মিলবে বলে জানানো হয়েছে।
যদিও ওষুধ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ দীনেশ এস ঠাকুর দাবি করেন, ১৯৪০ সালের ২৭ (ডি) ধারাকে যে অপরাধের আওতার বাইরে আনা হয়নি, সেটা খাতায়কলমে ঠিক। কিন্তু নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করেও জেলে যাতে না যেতে হয় এবং জরিমানা দিয়ে রেহাই পাওয়া যায়, সেই পথ প্রশস্ত করা হয়েছে।