ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে চলছে দর কষাকষি। গত বৃহস্পতিবারই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, নিমিশা প্রিয়াকে নিয়ে এখনই ভয়ের কিছু নেই। এই আবহে নিমিশাকে বাঁচাতে গ্লোবাল পিস ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা এবং খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক ডঃ কেএ পলের আর্থিক অনুদানের প্রচারকে ভুয়ো বলে বাতিল করে দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।কেন্দ্রের তরফে স্পষ্ট বলা হয়েছে, নিমিশা প্রিয়াকে নিয়ে যে খবর ছড়াচ্ছিল, তা সঠিক নয়।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়, নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচাতে ৮.৩ কোটি টাকা প্রয়োজন। আর এই দাবি করা হয়েছে ডঃ একে পলের এক্স হ্যান্ডেল থেকে। পলকে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক হিসেবে পরিচিত। এক্স বার্তায় একে পল 'সেভ নিমিশা প্রিয়া' নামে একটি পোস্টার পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, 'নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচাতে সরাসরি ভারত সরকারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দান করুন। আমাদের ৮.৩ কোটি টাকা প্রয়োজন।' ওই পোস্টে বিদেশ মন্ত্রকের নামে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একটি অ্যাকাউন্টের নম্বরও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই দাবি মঙ্গলবার বাতিল করে দিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকের ফ্যাক্ট চেক জানিয়েছে, 'নিমিশা প্রিয়া মামলায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত সরকারের নির্ধারিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক অনুদান চেয়ে দাবি করা হচ্ছে। এটি ভুয়ো খবর।'
ঘটনার সূত্রপাত
কেরলের পালক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া নার্সের কাজ নিয়ে ২০০৮ সালে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। স্বামী টমি থমাস এবং মেয়েকে নিয়ে ইয়েমেনে থাকতেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং ১১ বছরের কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা ইয়েমেনেই থেকে গিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল নিজের ক্লিনিক খুলবেন। ওই বছরই ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। মাহদি তাঁকে নতুন ক্লিনিক খুলতে সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন। কারণ, আইন অনুযায়ী, ইয়েমেনে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে দেশীয় অংশীদারের দরকার ছিল নিমিশার। সেই মতো ২০১৫ সালে দু’জন মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন। এরপর থেকেই শুরু হয় দুই অংশীদারের মতবিরোধ।অভিযোগ, নিমিশার টাকা এবং পাসপোর্ট মাহদি কেড়ে নিয়েছিলেন। মারধর করে নিমিশাকে মাদকসেবনেও বাধ্য করেছিলেন মাহদি। আইনি কাগজপত্রে নিমিশাকে স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়ার পথও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মাহদিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন ওই নার্স। নিমিশার দাবি, মাহদিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু ওভারডোজের কারণে মৃত্যু হয় মাহদির। এরপর হানান নামে এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে মাহদির দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন ওই নার্স। ওই মাসেই ইয়েমেন ছেড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান নিমিশা। সেই থেকে ইয়েমেনের জেলেই বন্দি রয়েছেন ভারতীয় যুবতী।