ডাক্তারি পরার স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়ে। প্রেমিকের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন।কিন্তু মেয়ের সেই ইচ্ছে মানতে পারেনি পরিবার। তাই তরুণীকে গলা টিপে খুন করলেন বাবা ও কাকা। এমনকী প্রমাণ লোপাট করতে পুড়িয়ে দেওয়া হয় দেহ।আর এই হাড়হিম করা অভিযোগ ঘটেছে গুজরাটের বনসকাঁঠা জেলায়। ঘটনার তদন্তে নেমে মৃত তরুণীর কাকা শিবরামভাই প্যাটেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাবা সেন্ধাভাই প্যাটেল পলাতক। পুলিশ মনে করছে, ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত তরুণীর নাম চন্দ্রিকা চৌধুরী। ছেলেবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন চন্দ্রিকা। নিট পরীক্ষায় ৪৭৮ নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন। যা দিয়ে দেশের যে কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ তাঁর ছিল। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নই ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।কিন্তু পরিবারকে পড়াশোনার ব্যাপারে পাশে পাননি কখনও। প্রাপ্তবয়স্ক চন্দ্রিকার প্রেম ছিল হরেশ চৌধুরী নামে এক যুবকের সঙ্গে। চন্দ্রিকা ছিলেন স্বাধীনচেতা ও নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে সাহসী। তিনি প্রেমিক হরেশ চৌধুরীর সঙ্গে একত্রে বসবাস করতেন এবং কলেজে একসঙ্গে পড়াশোনা করতেন।কিন্তু মেয়ের এই আচরণ ভাল চোখে দেখেনি 'কৃষক' পরিবার।
পুলিশি সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে কলেজে গিয়ে কাকা শিবরামভাই চন্দ্রিকা ও হরেশকে একসঙ্গে পড়তে দেখেন। এরপর তিনি সেন্ধাভাইকে বলেন, 'মেয়েকে এখানে পড়তে পাঠানো উচিত নয়।' অভিযোগ অনুযায়ী, এই ঘটনার পর থেকেই পরিবার চন্দ্রিকাকে বাড়িতে আটকে রাখে বলে অভিযোগ।হরেশের অভিযোগ, বাড়িতে নানাভাবে নির্যাতন শুরু হয় চন্দ্রিকার উপর।পরিবারের ভয়ে সারাক্ষণ সিঁটিয়ে থাকতেন চন্দ্রিকা। সে সব কথা মেসেজ করে প্রেমিক হরেশকে জানাত চন্দ্রিকা। হরেশের দাবি, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে প্রেমিকা তাঁকে মেসেজে জানায়, 'আমায় এখান থেকে নিয়ে যাও। নইলে ওরা আমায় মেরে ফেলবে। আমায় বিয়ে দিয়ে দেবে। আমায় বাঁচাও।'
হরেশ আশঙ্কা করেন, তাঁর প্রেমিকাকে খুন করা হতে পারে। তিনি আদালতে হেবিয়াস পিটিশন দাখিল করেন। শুনানির আগেই জানা যায়, মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রিকার। তাঁর পরিবার মৃত্যু শংসাপত্র জমা দিয়ে জানায়, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মেয়ের। কিন্তু, হরিশের সন্দেহ হয়। তিনি পুলিশের কাছে তদন্তের আবেদন জানান।
অভিযোগ উঠেছে, দুধে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে চন্দ্রিকাকে খাওয়ান তাঁর বাবা সেন্ধাভাই। তারপরে ভাই শিবরামকে নিয়ে মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, শিবরাম গ্রামবাসীদের চন্দ্রিকার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন। এফআইআরে আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগে চন্দ্রিকাকে তাঁর বাবা বলেছিলেন, ‘দুধ খেয়ে ভালো করে বিশ্রাম কর। ঘুমোলে শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে।’ অভিযোগ, খুনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চন্দ্রিকার দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়, যাতে ময়নাতদন্ত বা অন্য কোনও প্রমাণ উদ্ধার করা না যায়। মেয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালাতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই চন্দ্রিকার বাবা ও কাকা তাঁকে খুন করেন।