যমুনা নদীতে বিষ জল মেশানো হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এনিয়ে জোর শোরগোল ভোট বাজারে। আপ নেতার দাবি হরিয়ানা থেকে এই জল আসছিল। তবে দিল্লিতে আসার আগেই তা আটকে দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানা অবশ্য কেজরির দাবি মানতে চায়নি। এবার এনিয়ে কমিশনে দরবার করেছিল বিজেপি। বিজেপির দাবি, অবিলম্বে কেজরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আর এবার গোটা ইস্যুতে অত্য়ন্ত সতর্ক পদক্ষেপ নিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। কমিশন এবার কেজরির দাবির স্বপক্ষে যথাযথ জবাব দাবি করেছে। আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। যমুনা নদীতে বিষ মেশানো ও গণহত্যার আশঙ্কা নিয়ে মন্তব্যের পেছনে উপযুক্ত তথ্য দাখিল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, একাধিক আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। জাতীয় সুরক্ষা ও শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে বাধা দেয় এমন মন্তব্য করা হলে কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে।
কমিশন দেখেছে যে এই ধরনের মন্তব্য করা হলে আঞ্চলিক গ্রুপগুলির মধ্য়ে শত্রুতা তৈরি হতে পারে। প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মধ্য়ে পারস্পরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। জল না পাওয়ার জেরে আইন শৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি হতে পারে।
কমিশন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নির্দেশ দিয়েছে যে মন্তব্য তিনি করেছেন তা নিয়ে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। এনিয়ে প্রামাণ্য তথ্য় জানাতে হবে। ২৯শে জানুয়ারি ২০২৫, রাত ৮টার মধ্যে এই জবাব দিতে হবে। যাতে কমিশন গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে।
কী বলেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল?
কেজরিওয়াল বলেছিলেন, দিল্লিতে হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে পানীয় জল আসে। হরিয়ানা থেকে যমুনা পথে পানীয় জল আসে। বিজেপির হরিয়ানা সরকার দিল্লিতে আসা যমুনার জলে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। এটা জল বোর্ডের ইঞ্জিনিয়াররা ধরে ফেলেছেন। বর্ডারেই আটকে দিয়েছেন। ভেতরে আসতে দেননি। এটা যদি দিল্লিতে চলে আসত আর পানীয় জলে মিশে যেত তবে না জানি কত মানুষের মৃত্যু হয়ে যেত। গণহত্যা হয়ে যেত। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টেও পরিস্কার করা যেত না। সেকারণেই জলের অভাব হচ্ছিল। এই ধরনের রাজনীতি ঠিক নয়। দু দেশের যুদ্ধের মধ্যে এসব হয়। দিল্লিতে যে জল আসছিল তাতে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল, আর পুরো দায় পড়ে যেত আপের উপর।
সেই সঙ্গেই তিনি বলেছিলেন, যতদিন কেজরিওয়াল রয়েছেন, ততদিন দিল্লির মানুষের কোনও ক্ষতি হতে দেব না। সেই সঙ্গেই তিনি জল নিগমের আধিকারিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন বিষয়টি আঁচ করেই সীমান্তেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেজরিওয়াল বলেন, যদি এই জল চলে আসত দিল্লিতে আর পানীয় জলের সঙ্গে মিশে যেত তবে জানি না দিল্লির কতজন মারা যেতেন। এটা একেবারে গণহত্য়ার মতো হয়ে যেত। তিনি বলেন, এটা এমন একটা বিষ যে দিল্লির ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টও সেটা পরিস্কার করতে পারত না।
কী বলেছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী?
হরিয়ানার মুখ্য়মন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি পালটা আক্রমণ করেছিলেন কেজরিওয়ালকে। তিনি বলেছিলেন, এটা হল তাঁর( কেজরিওয়াল) স্বভাব , তিনি অভিযোগ করেন তারপর পালিয়ে যান। আমি বলেছিলাম যে আপনি( অরবিন্দ কেজরিওয়াল) আপনার মুখ্য়সচিবকে পাঠিয়েছিলেন। আমি সোনিপাত যেখান থেকে দিল্লিতে জল যাচ্ছে সেখানকার জল পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলাম। তিনি অ্যামোনিয়ার কথা বললেন। তিনি বললেন জলের অভাবের কথা। কিন্তু জলের কোনও অভাব নেই। জল বণ্টন নিয়ে একটা ইস্যু ছিল। এরপরই হরিয়ানার মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, ১০ বছর ধরে তিনি জলের বণ্টনটাই করতে পারলেন না। তিনি মঞ্চ থেকেও বলেছিলেন। কিন্তু তারপরেও এখনও মানুষ দূষিত জল খাচ্ছেন। এই সব অভিযোগ না করে তিনি কাজ করুন। দিল্লির মানুষ তাঁদের মন তৈরি করে ফেলেছেন। তারা এবার একটা বিরাট শিক্ষা দেবেন।