ওড়িশায় অধ্যাপকের যৌন হেনস্তার বিচার চেয়ে ভরা কলেজ ক্যাম্পাসে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন ছাত্রী। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। হাসপাতাল সূত্রে খবর, চিকিৎসকদের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও সোমবার রাতে মৃত্যু হয় ওই ছাত্রীর। এদিকে গোটা ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ওড়িশার বিজেপি সরকার। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত অধ্যাপককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শিউরে ওঠার মতো ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার বালাসোরে। গত শনিবার বালাসোরের ফকির মোহন অটোনোমাস কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী কলেজেই নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে দেয়। দেহের ৯০ শতাংশ পুড়ে যায় ওই ছাত্রীর। তাঁকে প্রথমে বালাসোর জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ১২ জুলাই তাঁকে ভুবনেশ্বরের এইমস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।সোমবার রাতে ২০ বছর বয়সি ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।এইমস ভুবনেশ্বর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'তাঁকে বার্নস সেন্টারের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। রোগীকে আইভি লিক্যুইড, আইভি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। একটি নল লাগিয়ে হুঁশ ফেরানো হয়। মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল।'কিন্তু বার্নস আইসিইউতে রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি-সহ সম্ভাব্য সকল চিকিৎসা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তাঁকে বাঁচানো যায়নি। শেষে ১৪ জুলাই রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে তাঁকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করে।
সোমবার সন্ধ্যাই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ভুবনেশ্বরের এইমসের বার্ন ওয়ার্ডে ওই ছাত্রীকে দেখতে যান। পাশাপাশি ছাত্রীর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসায় সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
কী কারণে চরম পদক্ষেপ ছাত্রীর?
সম্প্রতি ২০ বছর বয়সী ওই ছাত্রী তাঁর কলেজের বিভাগীয় প্রধান সমীর কুমার সাহুয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগে আত্মহত্যা করেন তরুণী, এমনটাই অভিযোগ। কলেজ প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা এবং অধ্যক্ষের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া সত্ত্বেও, তাঁর আবেদন কেউ কানে তোলেনি। এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার বিকেলে নির্যাতিতা কলেজের অপর এক অধ্যাপকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যান। দ্রুত বিচারের দাবিও জানান তিনি। অভিযোগ, তারপরই তিনি কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতর নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন। ইতিমধ্যে, ওড়িশা পুলিশ অভিযুক্ত সমীর সাহু এবং ফকির মোহন কলেজের বরখাস্ত অধ্যক্ষ দিলীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে। আদালত তাদের ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং কলেজ প্রশাসনের কাছ থেকে জবাবদিহির দাবি জানাচ্ছে।