পাকিস্তান ও তালিবানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত সত্ত্বেও চিন এখন দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই কাবুলে যান সম্প্রতি। সেখানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রীদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ওয়াং। বৈঠক শেষে ওয়াং ই দুই দেশকে সব পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তিন দেশের উচিত কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা বজায় রাখা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করা। এদিকে কাবুলে বৈঠকের পর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানে বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ওয়াংয়ের। (আরও পড়ুন: ১২৪০ কোটির ক্ষতি! তাও ভারতীয় বিমানের জন্য পাক আকাশসীমায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ল)
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকেও দেখা গেছে ঝলক, অগ্নি ৫ মিসাইলের শক্তি কতটা জানেন?
বৃহস্পতিবার জারি করা এক বিবৃতিতে ওয়াং ই বলেন, চিন প্রতিটি দেশের মূল স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলি বুঝতে এবং সমর্থন করতে প্রস্তুত। এখানে বাইরের হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। এই অঞ্চলে জাতীয় সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে এমন যে কোনও গোষ্ঠী বা ব্যক্তির দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে চিন। ওয়াং ই বলেন, সন্ত্রাসবাদের উৎস নির্মূল করা প্রয়োজন। বিবৃতিতে কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করা না হলেও চিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে ওয়াংয়ের বৈঠকের সময় ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের (ইটিআইএম) কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়াংকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিন আশা করে যে আফগানিস্তান এই ধরনের সন্ত্রাসী বাহিনীকে মোকাবিলায় তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করবে। (আরও পড়ুন: 'লিপুলেখ আমাদের', ভারত-চিন স্থল বাণিজ্যে আপত্তি নেপালের, কড়া জবাব ভারতের)
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্ক সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে তেল বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না: রাশিয়া
পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের ৫৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত কারাকোরাম পর্বতমালা থেকে আফগানিস্তানের সাথে ত্রি-বিন্দু পর্যন্ত সিয়াচেন হিমবাহ পর্যন্ত আছে। পাকিস্তানের দখলে থাকা গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলের সঙ্গে আফগানিস্তানের ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। চিনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলের সঙ্গে আফগান সীমান্ত রয়েছে। অতীতে এই জিনজিয়াং অঞ্চল উইঘুর সংঘাতে আক্রান্ত হয়েছে। উইঘুররা স্বাধীন পূর্ব তুর্কিস্তান প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই কারণেই জিনজিয়াংয়ে সব সংঘাতের জন্য উইঘুর ইসলামি জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দায়ী করেছে বেজিং। এহেন পরিস্থিতিতে ওয়াং বলেন, তিন দেশের উচিত উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি বাড়ানো। (আরও পড়ুন: ভোটার হেরফের নিয়ে গবেষণায় কে টাকা দিয়েছে? CSDS-কে নোটিশ পাঠাল ICSSR)
এদিকে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হয়েছে তিন দেশই। বস্তুত, সিপিইসি হল চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ। এই প্রকল্প জিনজিয়াংকে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের সাথে সংযুক্ত করছে। এখন এটি আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে করিডোরটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর তীব্র বিরোধিতা করছে ভারত। ভারত এটিকে তার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে মনে করছে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে এই বিষয়টি উত্থাপন করে আসছে। ভারত শুধু সিপিইসি নয়, বিআরআই-এর বিরোধিতা করে।