ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।আর এরপরই চরম পদক্ষেপ করল ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, টার্গেট, গ্যাপ-সহ প্রধান মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা।এই মার্কিন রিটেল জায়ান্টগুলি ভারত থেকে অর্ডার আপাতত স্থগিত করেছে বলে একটি সূত্র এনডিটিভি প্রফিট-কে জানিয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পোশাক এবং বস্ত্র সরবরাহ স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে রপ্তানিকারীরা চিঠি এবং ইমেল পেয়েছেন।এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এই সিদ্ধান্তে প্রবল চাপে পড়েছে ভারতের বস্ত্র শিল্প।সূত্রের খবর, ক্রেতারা খরচের বোঝা ভাগাভাগি করতে অনিচ্ছুক এবং রপ্তানিকারকদের খরচ বহন করতে চান।অধিক শুল্কের ফলে খরচ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে প্রায় ৪-৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে।ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির বেশিরভাগটাই করে থাকে ওয়েলসপান লিভিং, গোকালদাস এক্সপোর্টস, ইন্দো কাউন্ট এবং ট্রাইডেন্টের মতো রপ্তানিকারক সংস্থাগুলি। এই সংস্থাগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত পণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ রপ্তানি করে।এইসব রপ্তানীকারকদের আশঙ্কা, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বারতের বরাদ্দ অর্ডার বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামে চলে যাবে, কারণ ওইসব দেশের উপর মার্কিন শুল্কের পরিমাণ মাত্র ২০ শতাংশ।ভারতীয় বস্ত্র ও পোশাকের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে মোট বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানির ২৮ শতাংশই ছিল সে দেশেই, যার মূল্য ছিল ৩৬.৬১ বিলিয়ন ডলার।
গত বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা করেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ভারত-সহ কিছু দেশের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হবে। এর আগে তিনি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।ফলে মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ২৭ অগস্ট থেকে। এই আবহে শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ উচ্চ পর্যায়ের ক্যাবিনেট বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কী প্রভাব দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পড়তে চলেছে, তা খতিয়ে দেখতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এদিকে বহু মিডিয়া রিপোর্টের দাবি, মার্কিন যুক্ররাষ্ট্রের এক ধাপে এত বেশি শুল্ক আরোপ গত ১০০ বছরে দেখা যায়নি। ‘ভীষণভাবে সুরক্ষিত মার্কিন অর্থনীতির আমলে’ ১৯৩০ সালে সবশেষ এই ধরনের উচ্চ রাজস্ব আদায়ের নজির দেখা গিয়েছিল।বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় ১০০টি দেশের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এবার নতুন করে শুল্ক আরোপের পর এক রাতেই বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারের দরপতন ঘটে। বিশেষ করে এশিয়ার বাজার পরিস্থিতি দেখেও বিষয়টির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্কবৃদ্ধির লক্ষ্য মূলত রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাশিয়ান তেল ক্রেতা ভারত ছাড়াও চিন ও তুরস্ক এই তালিকায় রয়েছে। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, শুক্রবারের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না হলে সব গ্রাহক দেশের উপর সেকেন্ডারি স্যাংশন আরোপ করা হবে।