রামলীলার আসরেই ঘটে গেল এক চরম মর্মান্তিক ঘটনা। দাশরথীর ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে মঞ্চেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লেন অভিনেতা। পুরো ঘটনা বন্দি হল ক্যামেরায়।
শনিবার রাতে রাজধানী দিল্লির বিশ্বকর্মা নগরের এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ রামলীলা দেখতে আসা দর্শকরা। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক অন্য অভিনেতা, অভিনেত্রীরাও। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রামলীলার আয়োজকরাও।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, মৃত ব্যক্তির নাম এস কৌশিক। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তিনি পূর্ব দিল্লির বাসিন্দা ছিলেন। জানা গিয়েছে, মঞ্চে শ্রীরামের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন এস কৌশিক। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রামলীলা উপলক্ষে উদ্যোক্তাদের তরফে খুব জমকালো আয়োজন করা হয়েছিল। দর্শকাসন ছিল ভর্তি। নির্দিষ্ট সময়েই মঞ্চে প্রবেশ করেন রামের বেশে থাকা এস কৌশিক।
তাঁর পরনে ছিল 'রাজবেশ'। তাতে সোনালী ও রুপোলি রঙের কারুকার্য ছিল নজরকাড়া। রামায়ণের শ্রীরামের মতোই কৌশিকের মাথায় বিরাট আকৃতির মুকুট এবং হাতে সুদৃশ্য ধনুক ছিল।
তিনি মঞ্চে ঢোকেন এবং এক পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে মঞ্চের উপর বসেন। নিজের দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে ডায়লগ বলেন। তারপর আবার উঠে দাঁড়ান। এরপর দুই পা হাঁটতেই শুরু হয় বিপত্তি।
ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এস কৌশিকের এক হাত রয়েছে তাঁর বুকের উপর। তাঁর যে শরীরে ততক্ষণে কষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছে, সেটা তাঁর মুখভঙ্গি দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এরপর কোনও মতে বুকে হাত চেপেই মঞ্চের পিছন দিকে চলে যান কৌশিক। তারপর সেখানেই পড়ে যান তিনি। অনেক ডাকাডাকি করেও আর সাড়া পাওয়া যায়নি তাঁর।
রামলীলার উদ্যোক্তা এবং পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার পরই এস কৌশিককে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন। তাঁকে আনন্দ বিহার এলাকার দীপক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁরা জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই প্রাণ গিয়েছে এস কৌশিকের।
প্রয়াত অভিনেতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি একজন প্রপার্টি ডিলার ছিলেন। অভিনয় করতে ভালোবাসতেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ১৯৮৭ সালে প্রথমবার শ্রীরামের চরিত্রে মঞ্চে অভিনয় করেন এস কৌশিক।
সেই শুরু! তারপর থেকে টানা ৩৭ বছর ধরে শ্রীরামের ভূমিকায় মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। এস কৌশিক খুব ভালো গান গাইতেও পারতেন। যে কারণে, মঞ্চে শ্রীরামের কোনও গানের দৃশ্য থাকলে, সেই দৃশ্যে নিজের গলাতেই গান গাইতেন তিনি।