ঘুমের মধ্যেই সব শেষ। সিকিমে ভয়াবহ ধসে মৃত্যু হল কমপক্ষে ৪ জনের। ৩ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের খোঁজে জোরদার তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে উদ্ধারকারী দল। স্থানীয় সূত্রে খবর, ধসটি উপর দিক থেকে নেমে এসে একটি বাড়িকে কাদামাটি এবং পাথরে ঢেকে দেয়। বাড়ির ভিতরে আটকে পড়েন পরিবারের সদস্যেরা।
জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে পশ্চিম সিকিমের রিম্বি এলাকার ইয়াংথাঙে ভূমিধস নামে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, ধসের কারণে ঘটনাস্থলেই তিন জন মারা যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ এবং সশস্ত্র সীমান্ত বলের (এসএসবি) সদস্যরা। উদ্ধারকাজে প্রাথমিক স্তরে হাত লাগান স্থানীয়রাও। ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় দুই মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। অপর জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পুলিশ জানিয়েছে, পাহাড়ি দুর্গম এলাকা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বারবার উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটছে। গ্যজিং-এর পুলিশ সুপার তশেরিং শেরপা জানান, ধসের ফলে একাধিক বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ভীম প্রসাদ লিম্বু (৫৩), তাঁর বোন অনিতা লিম্বু (৪৬), জামাই বিমল রাই (৫০), এবং সাত বছরের নাতনি আঞ্জল রাই। উদ্ধারকারীদের মতে, ধসের সময় সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন, ফলে পালানোর কোনও সুযোগই পাননি।
আরও খবর-'যুবকদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত!' পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে CBI-কে তাড়া সুপ্রিম কোর্টের
পশ্চিম সিকিমে লাগাতার বৃষ্টি হয়ে চলেছে। অতিবৃষ্টির জেরেই ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে। বৃষ্টির কারণে হিউম নদী প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। ফলে দুর্ঘটনাস্থল সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উদ্ধারকারী দল নদীর উপর একটি অস্থায়ী কাঠের সেতু তৈরি করেছে। ভবন ও আবাসন এবং শ্রম দফতরের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক ভীম হাং লিম্বু রাত ২টোর সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ তদারকি করেন। তিনি জানান, অবিরাম বৃষ্টিপাত ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট উদ্ধারকাজ ব্যাহত করলেও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে অনেকটাই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেছে। মন্ত্রী বলেন, 'টানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি চরম কঠিন হলেও সব দফতর একসঙ্গে কাজ করছে। নিখোঁজদের উদ্ধার এবং দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়ার কাজ চলছে।' ভূমিধসের জেরে বিগত দু–’তিন মাসের মধ্যে বেশ কয়েক বার বন্ধ হয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক শিলিগুড়ি থেকে সিকিমে পৌঁছোনোর অন্যতম রাস্তা। এই রাস্তা বন্ধ থাকলে দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটকরা। গত এপ্রিল এবং জুনে পর পর ভূমিধসে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল উত্তর সিকিম। বহু পর্যটক আটকে পড়েছিলেন ধসের কারণে। তারমধ্যে বাংলার বহু পর্যটকও ছিলেন।
আরও খবর-'যুবকদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত!' পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে CBI-কে তাড়া সুপ্রিম কোর্টের
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর আগাম আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে, যার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার সব জেলা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। মনসুনে সিকিমে ভূমিধস সাধারণ ঘটনা হলেও, এই ধস বিশেষভাবে ভয়াবহ ছিল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। কারণ একটি বড় পাহাড়ি অংশ আচমকাই ধসে পড়ে, যার ফলে নিচের নদীতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে, এবং রাজ্যজুড়ে সতর্কতা জারি রয়েছে।