দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। গোটা দেশের সঙ্গে এবার জুড়ে গেল জম্মু ও কাশ্মীর। শুক্রবার ভুস্বর্গে বিশ্বের উচ্চতম ব্রিজ চেনাব সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।চেনাব নদী থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই সেতু। আইফেল টাওয়ারের থেকে ৩৫ মিটার বেশি এই সেতুর উচ্চতা। এছাড়াও দিল্লির কুতুব মিনারের তুলনায় এই সেতুর উচ্চতা পাঁচগুণ বেশি। কাটরা এবং কাজিগুন্ডের মধ্যে দুটি পাহাড়কে যুক্ত করেছে চেনাব সেতু। যা আধুনিক প্রযুক্তির অপূর্ব এক নির্দশন। আর যাঁদের কাঁধে ভর করে এই ব্রিজ দাঁড়িয়েছে, সেই টিমের অন্যতম সদস্য হলেন রক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ জি মাধবী লাথা।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের অধ্যাপক মাধবী লাথা ১৭ বছরের মেধা ও শ্রমের অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নির্দশন হল চেনাব সেতু।১২০ বছর ধরে টিকে থাকার জন্য করা হয়েছে এর ডিজাইন।চেনাব সেতুটি বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল এবং খিলান সেতু, যার ডকের উচ্চতা নদীর তলদেশ থেকে ৩৫৯ মিটার। যা প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে ৩৫ মিটার উঁচু। ১,৩১৫ মিটার লম্বা ইস্পাতের খিলান এবং কংক্রিটের কাঠামো, যার মধ্যে ৫৩০ মিটার লম্বা একটি অ্যাপ্রোচ ব্রিজ এবং ৭৮৫ মিটার লম্বা একটি ডেক আর্চ ব্রিজ (সেতুর যে অংশে যানবাহন চলে) রয়েছে।
২০০২ সালে এই প্রকল্পে সিলমোহর পড়ে।এরপর ২০০৫ সালে এই ব্রিজ তৈরির প্ল্যানিংয়ের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সাল থেকে মূল কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে। ২০২৪ সাল থেকে চেনাব সেতুর উপরে শুরু হয় রেলের ট্রায়াল রান। চলতি বছর জানুয়ারি মাসেই সফলভাবে এই সেতুর উপরে ট্রায়াল রান শেষ করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। মাঝে রয়েছে হাজারো পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা। যে টিম অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই কাঠামো দাঁড় করিয়েছে, সেই টিমকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাধবী লাথা। প্রাথমিকভাবে দুই পাহাড়ের পাথর পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেখানেই বেশ কিছু ঝুঁকি লক্ষ্য করে সেতু নির্মাণের কাজে নিয়োজিত টিম। সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় মাধবীর টিম। ব্রিজের ভিত শক্তিশালী করার জন্য পাথরের টুকরো এবং স্টিলের রড দিয়ে সিমেন্ট গ্রাউটিং করা হয়। হাওয়ার প্রবল গতি সহ্য করতে পারবে এমনই বড় এবং গভীর ভিত নির্মাণ করা হয়।
এই প্রসঙ্গে মাধবী বলেন, ‘সমস্ত ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে আমরা ডিজাইনে বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছি। উদাহরণস্বরূপ, মূল প্রজেক্টে ভিতগুলো যেখানে থাকার কথা ছিল সেখান থেকে সামান্য সরানো হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আমরা কোনও ঝুঁকিপূর্ণ ডিজাইন করতে পারি না।' চেনাব সেতুপ্রায় ১,৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রেনের গতি সহ্য করতে পারবে এই সেতু। এই চেনাব সেতু রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। রিয়াসি জেলার বাক্কাল এবং কৌরির মধ্যে নির্মিত, সেতুটি জোন-ভি-তে পড়ে, যা একটি প্রধান ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত।
প্রায় ৪৩,৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ইউএসবিআরএল প্রকল্পটিতে ৩৬টি টানেল (১১৯ কিলোমিটার বিস্তৃত) এবং ৯৪৩টি সেতু রয়েছে। এই রেল পথ কাশ্মীর উপত্যকাকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করবে। ২৭২-কিমি উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেললাইনের শেষ প্রসারণের মধ্যে, ১১৮-কিমি কাজিগুন্ড-বারামুল্লা সেকশনটি অক্টোবর ২০০৯ সালে চালু করা হয়েছিল। তারপর জুন, ২০১৩-সালে কাজিগুন্ড এবং বানিহালের মধ্যে ১৮-কিমি রেলপথ প্রসারিত হয়। তারপর বানিহাল-সাঙ্গলদান (৪৮.১ কিমি) মাঝের রেলপথ উদ্বোধন হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বাকি ছিল ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কাটরা-সাঙ্গলদান অংশটি। এটি ৬ জুন চালু হওয়ার কথা।এই অংশেই প্রধানমন্ত্রী চেনাব নদীর উপর বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতুর উদ্বোধন করেছেন।