হায়দরাবাদের চারমিনার লাগোয়া গুলজার হাউসের একটি ভবনে বিধ্বংসী আগুনে কমপক্ষে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে আট জনই শিশু। অগ্নিকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় দমকলের ১১টি ইঞ্জিন। বেশ কয়েক জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও, অনেকেই আটকে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে তেলাঙ্গানার দুর্যোগ মোকাবিলা এবং অগ্নিনির্বাপণ পরিষেবার ডিজি ওয়াই নাগি রেড্ডি জানিয়েছেন, শর্ট সার্কিটকের কারণেই এই ভয়াবহ আগুন লেগেছে।
জানা গেছে, রবিবার সকাল ৬:৩০ টা নাগাদ চারমিনারের কাছে ঐতিহাসিক গুলজার হাউজের একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। গুলজার হাউসের নীচে একটি গয়নার দোকান ছিল। সেখানে প্রথমে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে দোকানের উপরে থাকা বহুতলে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই আগুন। আতঙ্কে চারিদিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন বাসিন্দারা। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ১১টি ইঞ্জিন। কয়েক ঘন্টার যুদ্ধকালীন চেষ্টায় দমকলবাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে তড়িঘড়ি হাসপাতালে পাঠায়।
তেলাঙ্গানার দুর্যোগ মোকাবিলা এবং অগ্নিনির্বাপণ পরিষেবার ডিজি ওয়াই নাগি রেড্ডি এক বিবৃতিতে জানান, 'প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এই ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের কারণ শর্ট সার্কিট।' তিনি আরও বলেন, ১৭ জনের মধ্যে বেশির ভাগেরই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তাঁর কথায়, 'অগ্নি নির্বাপন বিভাগ সকাল ৬:১৬ মিনিটে ফোন পায় এবং ৬:১৭ মিনিটে পর্যাপ্ত কর্মী-সহ ১১ টি অগ্নি নির্বাপক ইঞ্জিন পাঠায়। অগ্নি নির্বাপন বিভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র এবং অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করে লোকজনকে উদ্ধার করে। কিন্তু তারপরেও ১৭ জনকে বাঁচানো যায়নি। ওয়াই নাগি রেড্ডি আরও বলেন, 'অগ্নি নির্বাপন বিভাগের আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং লোকজনকে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি ছিল না... ভবনের মাত্র দুই মিটারের একটি প্রবেশপথ ছিল, যা একটি সুড়ঙ্গের মতো। প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় যাওয়ার জন্য মাত্র এক মিটারের একটি সিঁড়ি রয়েছে। এটি অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে বাঁচার এবং উদ্ধার অভিযানকে খুব কঠিন করে দিয়েছিল। সকাল ৯ টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়... ভবনের ভিতরে মোট ২১ জন ছিলেন... মৃত্যুর কারণ ধোঁয়া ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা; কারোরই পোড়া ক্ষত ছিল না।
তেলাঙ্গানা অগ্নি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া জরুরি ও নাগরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃক প্রকাশিত ১৭ জন মৃতের তালিকায় প্রকাশ করেছে। তালিকায় ১০ বছরের কম বয়সী আট শিশুর নাম রয়েছে। নিহতরা হল, প্রতান (১.৫ বছর) । অন্য সাত শিশু হ্যামি (৭), প্রিয়াংশ (৪), ইরাজ (২), আরুশি (৩), ঋষভ (৪), অনুয়ান (৩) এবং ইদ্দু (৪)। তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আগুনে আটকে পড়া পরিবারগুলিকে বাঁচানোর জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার এবং উন্নত চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, তিনি এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানিতে গভীরভাবে মর্মাহত এবং প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০,০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন।